

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের খেলা তখন শেষ। দলের সবাই টিম হোটেলে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের আনুষ্ঠানিকতা যেন তখনো শেষ হয়নি। অবশ্য শেষ হওয়ারও কথা নয়। এই টেস্টের সবকটা দিনই তো তারই হওয়ার কথা। টেস্টটা তো এখন মুশফিক টেস্ট বললে ভুল হবে না, তাই না! পড়ন্ত বিকেলেও সেটারই ছাপ দেখা মিলল মিরপুরে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করেই দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন মুশফিক। এরপরই টিম হোটেলে ফেরেন। তবে দিনের শুরু থেকে শেষ—পুরোটা সময়জুড়েই মুশফিক বন্দনার দেখা মিলল মিরপুরে।
বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার একশ টেস্ট খেলতে নামছেন—এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি-ই বা হতে পারে। মুশফিক সেই প্রাপ্তির রত্ন বটে। তিনিই প্রথম, তিনিই পথপ্রদর্শক। তাই তো দিনের শুরুটাও ছিল তাকে ঘিরেই। সকাল ৯টার মধ্যেই প্রস্তুত মিরপুর স্টেডিয়াম। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডও মুশফিককে অভিনন্দন জানাতে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের সবাই উপস্থিত। তবে সবচেয়ে বড় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল মুশফিকের পরিবার। মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান, কোচ, সতীর্থ, ভক্ত-সমর্থক কেউই বাদ পড়েননি। যাদের হাত থেকেই বিকেএসপিতে মুশফিকের ক্রিকেটে হাতেখড়ি, তারাও ছিলেন বিশেষ এই মুহূর্তের সাক্ষী।
প্রায় এক মিনিটের ছোট্ট বক্তব্যে মুশফিক সবার অর্জনকেই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ এই দারুণ সুযোগটির জন্য। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা আজকে উপস্থিত হয়েছেন। আমার পুরো পরিবার, আমার বাবা-মা, বিশেষ করে আমার স্ত্রী, যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, কাটিয়েছে অনেক নির্ঘুম রাত। দলের সবাই, কোচ, বন্ধুবান্ধবসহ সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ পরের বাক্যে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য নিজের শতভাগ নিগড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। আমিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একশ ভাগ দেব, যেমনটা সব সময় চেষ্টা করি।’ মাঠে থাকা প্রতিপক্ষের প্রতিও কৃতজ্ঞতার কমতি ছিল না তার কণ্ঠে, ‘আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলকেও ধন্যবাদ জানাই এখানে উপস্থিত থাকার জন্য। আশা করি, দারুণ একটি টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আমরা উপলক্ষ উদযাপন করব।’ মুশফিকের এমন অর্জনের জন্য অভিনন্দন বার্তা দেন তার শততম টেস্টের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
তবে মুশফিককে বিশেষ ক্যাপ দিয়ে বরণ করে নেন তার প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে খেলা ১১ ক্রিকেটারের মধ্যে নামের আদ্যক্ষরের কারণে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার আকরাম খান। তিনিও মুশফিককে বিশেষ একটি ক্যাপ তুলে দেন। একই সঙ্গে মাঠে থেকে মুশফিককে অভিবাদন জানান তার প্রথম টেস্টের স্কোয়াডের কয়েকজনও— হাবিবুল বাশার, আনোয়ার হোসেন মনির, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, নাফিস ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফীস ও তালহা জুবায়ের। মুশফিকের অভিষেকের সঙ্গী সবার গায়ে ছিল বিশেষ পোলো শার্ট। তাকে বিশেষ ক্রেস্ট তুলে দেন বর্তমান বিসিবি সভাপতি ও অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম ও বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এরপর শততম টেস্টের স্কোয়াডে থাকা সতীর্থদের স্বাক্ষর সংবলিত জার্সি উপহার দেন হাবিবুল বাশার ও নাজমুল হোসেন।
মুশফিককে দিয়ে শুরু; এরপর এটা হয়তো থাকবে চলমানও। সতীর্থরা তাই তো ভাগ্যবানই বোধ করতে শুরু করেছেন নিজেদের। মুমিনুল যেমনটা বলেছিলেন প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে, ‘এই পরিবেশ তো এর আগে কোনো সময় দেখিনি। এমনকি মাঠ থেকে বিদায়ও কোনো সময় দেখিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল যে এটা বিদায়ের দিকে যাচ্ছে, (হাসি) পরে দেখলাম যে না ১০০ টেস্টের মতো যাচ্ছে। আমার নিজেরও দেখে অনেক ভালো লাগল। এই কালচার চালু থাকলে তরুণরাও টেস্ট ক্রিকেট ঘিরে অনুপ্রাণিত হবে।’ মাঠে মুশফিক যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণই সবার নজর ছিল তার ওপর। লম্বা ইনিংস খেললেন; তার ওপরই তাকিয়ে ছিল দল। বোর্ডের পরিচালকদের চোখও সরেনি। পুরোটা সময় মুশফিকের দিকেই ছিলেন তারা। ২৮তম ওভারে নেমেছিলেন উইকেটে; ৯০ ওভার থিতু থেকে দিন শেষ করে অপরাজিত থেকেই ফিরে গেছেন। আজও তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে সবাই।
মন্তব্য করুন