কান্না চেপে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন তামিম ইকবাল। চোখগুলো টকটকে লাল হয়ে আছে। কালো কাচে মোড়ানো গাড়িতে চড়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলেন তিনি। কাজীর দেউড়ির পারিবারিক বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে যাননি তিনি। তবে কোথায় গিয়েছেন, সে তথ্য আর জানায়নি। কিন্তু তার আগে ১৩ মিনিটের যে সংবাদ সম্মেলন করলেন, সেখানে অর্ধেক সময়ই চোখের জলে টিস্যু ভিজিয়েছেন তিনি। আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছেন দেশের অন্যতম সেরা এ ব্যাটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এভাবে বিদায় নিতে হবে, সেটাও কী কখনো ভেবেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী এ ওপেনার! তামিমের পুরো বক্তব্য কালবেলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এ মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না, বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে, এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দেব।
আমি সব সময় একটা কথা বলেছি যে আমি খেলেছি... (কান্না)। আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য (আবার কান্না)। কাজেই আমি নিশ্চিত নই, আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি পুরো ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আরও অনেকেই আছে যাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান, ওনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাকে ধন্যবাদ দিই।
এই এমএ আজিজে তপনদা নামে একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে... (আবার আবেগে ভেঙে পড়ে নীরব)। যার কাছে ছোটবেলা থেকে আমি অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ দিই। আমি ক্যারিয়ারে যত খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে
অনূর্ধ্ব-১৩, ১৭ বা ১৯, ১৮, প্রিমিয়ার লিগ। জাতীয় দল যাদের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিই। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা আমার সতীর্থ ছিলেন তাদের সবাইকে।
ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন দেশকে লম্বা সময় প্রতিনিধিত্ব করার এবং অধিনায়কদের বাংলাদেশের। আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। একটা জিনিস বলব, আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি, আমি সেরাটা দিতে চেয়েছি (আবার গলা ধরে এলো)। আমি হয়তো যথেষ্ট নয়, অথবা ততটা ভালো নয়। কিন্তু যখনই মাঠে ছিলাম আমি শতভাগ দিতে চেয়েছি। আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। আপনারা দেখছেন আমি একদম কথা বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু আমি আশা করি, আপনারা পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। (আবার কান্না)। এটা কথা বলার মতন সহজ পরিস্থিতি নয়। আমি এত বছর ধরে খেলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর সহজ নয়। এত অল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের ডাকা হয়েছে। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
আমি একটা অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে, যাদের কথা আপনারা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন যাই হোক—ক্রিকেটে যেন থাকেন; সীমার বাইরে যাবেন না। ভালো করলে ভালো লিখবেন, খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। আপনারা সবাই বুঝতে পারেন যা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম হয়ে যায়। যারা ক্রিকেট খেলছে এখন এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর বিশ্বকাপের জন্য। আমি আশা করি, আপনারা দলের সদস্যের মতো থাকবেন, সমর্থন দেবেন।
‘আমি আবারও বলি, ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি বাবার স্বপ পূরণের জন্য। কতটা করতে পেরেছি জানি না। হয়তো আরও অনেককে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল, নাম ভুলে গেলে ক্ষমা চাই। আমার মা, তাকে ভুলব কী করে। আমার ভাই, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান। আমার এই ভ্রমণে তারা অনেক ভুগেছে, আবার আনন্দের সময়ও ছিল। আমি তাদের ধন্যবাদ দিই। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। একটা কথাই বলব, আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দিন। ইটস এ দ্য এন্ড অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতাগুঁতি কইরেন না। আমি সব সময় বলেছি দল সব সময় যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। দুই ম্যাচ আছে এই সিরিজের আশা করি দল জিতবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন