ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ডার্বি। স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দেওয়া গোল করলেন মারিও বালোতেল্লি, যা উদযাপনে অভিনব পন্থা অবলম্বন করলেন ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড। জার্সির নিচে টি-শার্টে লেখা ছিল ‘হোয়াই অলওয়েজ মি?’। একের পর এক সমালোচনা ও বর্ণবাদের শিকার হয়ে বিরক্ত মারিওর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল সেই উদযাপনে। ২০১১ সালে প্রদর্শিত ইতালি ফরোয়ার্ডের স্লোগানটা কি এখন হাকিম জিয়েচের বুকে ঝোলানো উচিত? নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া মরোক্কান উইঙ্গারের দলবদল প্রচেষ্টা বারবার আটকে যাওয়ায় তেমনটাই করা উচিত বোধ করি!
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ২০২০ সালে দলে ভেড়ায় চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটির হয়ে শুরুর দিকে সময়টা মন্দ কাটছিল না; কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, চেলসিতে ব্রাত্য হয়ে পড়ছেন। কোচ ও ক্লাব অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনা বুঝতে পারেন ব্লুজদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মরক্কোর হয়ে কাতার বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো প্লে-মেকারের স্থান নেই। নিজেকে শীর্ষ পর্যায়ে ধরে রাখার মিশনে ইংলিশ ক্লাবটি ছেড়ে গত মৌসুমের শেষদিকে পিএসজিতে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন ৩০ বছর বয়সী এ ফুটবলার। প্রাথমিকভাবে ধারের জন্য দুই ক্লাব সম্মত হয়, পিএসজির সঙ্গে ব্যক্তিগত টুকিটাকি বিষয়ও চূড়ান্ত করে ফেলেন সাবেক আয়াক্স তারকা। চেলসি ছেড়ে ভবিষ্যতে পিএসজিতে পাড়ি জমানোর ধারাও ছিল চুক্তিতে। গত শীতকালীন দলবদলের শেষ দিনে এসে এ উইঙ্গারের চেলসি ছাড়ার প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে! ট্রান্সফারের সময়সীমা পার হওয়ার পর কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে বলে চুক্তিটা ভেস্তে যায়—এমন গুঞ্জন রটে। দুই ক্লাবের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথাও শোনা গেছে। সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত মনের বিরুদ্ধে চেলসিতেই থাকতে বাধ্য হন হাকিম জিয়েচ।
গ্রীষ্মকালীন দলবদলে চেলসি যখন একের পর এক ফুটবলারকে সৌদি আরবের ক্লাবগুলোতে বিক্রি করছিল, তখন মরোক্কান ফরোয়ার্ডের সামনেও নতুন গন্তব্য বেছে নেওয়ার সুযোগ আসে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল-নাসরের সঙ্গে কথা পাকা হয় হাকিম জিয়েচের। এ ফুটবলারের দলবদল ইস্যুতে চেলসি ও
আল-নাসরও সম্মত হয়। তার পরও চেলসি ছাড়া হয়নি মরক্কোকে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার অন্যতম কারিগরের। এ যাত্রায় খবর রটে,
আল-নাসরে মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি হাকিম জিয়েচ। যদিও নিজের পায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে এমন দাবি উড়িয়ে দেন এ ফুটবলার। যেখানে বাহ্যিকভাবে পায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়নি। পরে বিশ্বগণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়—২০১৮ সালে লেস্টার সিটি থেকে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড আহমেদ মুসাকে দলে ভেড়ানোর পুরো অর্থ এখনো পরিশোধ করেনি আল-নাসর। যে কারণে ফিফা সৌদি আরবের
প্রো-লিগের ক্লাবটির নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত রায়ে ফিফা বলেছে, আহমেদ মুসাকে দলে ভেড়ানোর চুক্তি অনুযায়ী
আল-নাসরকে ৪ লাখ ৬০ হাজার ইউরো পরিশোধ করতে হবে। গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নেমে যাওয়া লেস্টার অর্থ বুঝে পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ফিফা।
মেডিকেল পরীক্ষা হোক কিংবা ফিফার নিষেধাজ্ঞা হোক—হাকিম জিয়েচের চেলসি ছাড়তে না পারাটা অস্বস্তিকর! যেমনটা ছিল শীতকালীন দলবদলে ধারে পিএসজিতে যেতে না পারা। স্টামফোর্ড ব্রিজ ছাড়ার মরিয়া প্রচেষ্টা বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হাকিম জিয়েচ নিজেই হয়তো মারিও বালোতেল্লির বিখ্যাত স্লোগান ‘হোয়াই অলওয়েজ মি’ সংবলিত টি-শার্ট পরার চিন্তা করছেন!
মন্তব্য করুন