বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিসহ সহিংসতায় ৮৯ জন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৪২ জন শিক্ষার্থী, ২৯ জন নানা শ্রমে যুক্ত। আন্দোলনে আহত অনেক শিশু এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেউ কেউ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। তাদেরই একজন মো. কাওসার খাঁ। দিনরাত বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে ১০ বছরের শিশুটির। গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থান এখনো শুকায়নি। ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারে না।
গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিছিল নিয়ে ছাত্ররা উত্তরার আজমপুরের দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় মকবুল মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র কাওসারও ওই মিছিলে শামিল হয়। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরই গোলাগুলি শুরু হয়। একটি গুলি কাওসারের পিঠের ডান দিকে কিডনির ওপরে ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়। সঙ্গে সঙ্গে কাওসার পড়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় রাস্তা। তাকে তুলে দ্রুত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যায় ছাত্ররা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা, ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগে না কাওসারের। আক্ষেপ করে বলে, ‘আমার বন্ধুরা স্কুলে যায়, আমি যেতে পারব না?’ চিকিৎসকের বরাতে কাওসারের পরিবার জানিয়েছে, পুরোপুরি এক বছর বিশ্রামে থাকতে হবে তাকে, নড়াচড়া করা যাবে না। মাস ছয়েক পর এক্স-রে করতে হবে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাওসারের বাবা মো. মনোয়ার খাঁ কালবেলাকে বলেন, ‘ছেলের গুলি লেগেছে, তার বন্ধুরা এই খবর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে ছাত্রদের মোবাইলে ছেলের ছবি দেখাই। তারা বলে, আমার ছেলেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। কুয়েত মৈত্রীতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পর আর রাখতে চায়নি। সেখান থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসার খরচ হাসপাতাল কিছুটা দিয়েছে। বাকিটা আমি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ছেলেদের ভালো লেখাপড়া করাব বলে সিলেট থেকে ঢাকায় আসছিলাম। উত্তরা আব্দুল্লাহপুর কোটবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে বাসা ভাড়া নিই। দুই ছেলের মধ্যে কাওসার ছোট। ময়লার গাড়ি থেকে কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল কিনে ভ্যান গাড়িতে এনে বাছাই করে রেললাইনের পাশে বিক্রি করি। সংসারে অভাব থাকলেও সুখ ছিল। মাত্র ১০ বছর বয়সে ছেলেটার (কাওসার) জীবন নষ্ট হয়ে গেল।’
ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে মা রিতা বেগমের কান্না থামছে না। তিনি বলেন, ‘কলোয়েল মার্কেটে বুয়ার কাজ করি। অসুস্থ ছেলেকে শাশুড়ি, ননদের কাছে রেখে পেটের দায়ে কাজে যাই। কাজ না করলে এতজনের সংসার, ছেলের ওষুধের খরচ কোথা থেকে পাব!’