পরপর পাঁচবার ঘোষণা দিয়ে গত চার বছরে একবারও সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এতে শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের আক্ষেপ দিন দিন বাড়ছেই। নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলছে না। সমীক্ষা বলছে, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি করেছেন। তাদের কেউই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ বহুবার সমাবর্তনের আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসনের সদিচ্ছা ও কার্যকরী উদ্যোগের অভাবই নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার প্রধান কারণ।
চবিতে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। এর আগে তৃতীয় সমাবর্তন হয় তারও আট বছর আগে ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় সমাবর্তন হয় আরও ৯ বছর আগে ১৯৯৯ সালে এবং প্রথম সমাবর্তন হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটেও দেখা গেছে ভিসির সমাবর্তনবিমুখ চিত্র। বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে সমাবর্তনের জন্য কোনো বরাদ্দই রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় গত রোববার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম বার্ষিক সিনেট সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৪০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও সমাবর্তন খাতে নেই কোনো বরাদ্দ। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, জাতীয় দিবস ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তনের ঘোষণা দেন ভিসি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, গত ৫৭ বছরে মাত্র চারবার সমাবর্তন হওয়া দুঃখজনক। এটি আমাদের সক্ষমতার ঘাটতিও প্রকাশ করে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ভিসি সমাবর্তন নিয়ে ভাবছেন। শিগগির আয়োজন করবেন আশা করি। বাজেটে বরাদ্দের বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ চবি ভিসি শিরীণ আখতার। গত রোববার চবির ৩৫তম সিনেট সভায় সিনেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক ভিসির কাছে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। কালবেলার পক্ষ থেকে কথা বলতে ভিসি শিরীণ আখতারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন