পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট জাজিরার নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর জেলা সদর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। চার বছর পেরিয়ে গেলেও এর মধ্যে তিন দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তারপরও ঠিকাদারের গাফিলতি আর সড়ক বিভাগের দায়সারা তদারকির কারণে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৫৫ ভাগের একটু বেশি। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে খুঁড়ে রাখা সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে সড়কটি যেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে যখন পদ্মা সেতু চালু করা হবে তখন থেকেই শরীয়তপুরবাসী সড়কটি দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দুই বছর বেশি সময় পার হয়েছে। দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ পদ্মা সেতুর সুবিধা ভোগ করতে পারলেও শরীয়তপুরবাসীর ভাগ্যে এখনো জোটেনি পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুবিধা। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের নাওডোবায় পৌঁছালেই শুরু হয় দুর্ভোগ।
একদিকে সরু রাস্তা, অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখায় ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। মাত্র ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লাগছে বাড়তি সময়, বেড়েছে জ্বালানি খরচ, নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত দুই লেনের ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালের মার্চ মাসে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৫৫ ভাগের একটু বেশি। সর্বশেষ ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সড়কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তেমন লোকবল নেই। নামেমাত্র শ্রমিক আর যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে ২৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ। সংস্কারকাজ ধীরগতির কারণে পুরো সড়কজুড়েই ভাঙাচোরা আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কটিতে চলাচলকারী যাত্রীরা। একটু বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। চলাচলে যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সৃষ্টি হয় যানজট, ঘটে দুর্ঘটনা। ২৮ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। তবে সড়ক বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়া এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজে গতি আনা যাচ্ছে না।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের বাসের চালক আবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, জাজিরা থেকে নাওডোবা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা সড়কটির। এখান দিয়ে গাড়ি চালানোর কোনো উপায় নেই। সড়কজুড়ে ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা আর ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের। তারপরও কাজের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। আমরা চাই দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করা হোক।
রাসেদুল ইসলাম রিয়াদ নামে একজন কালবেলাকে বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলার মানুষ পেলেও শরীয়তপুরের মানুষ সামান্যটুকুও পায়নি। সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। সংস্কারকাজের কারণে ভাঙা ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যেন মরণফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন ঠিকাদার। জেলা শহর থেকে নাওডোবা পর্যন্ত সড়কে চলাচল করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
আলমগীর নামে একজন অটোচালক কালবেলাকে বলেন, খানাখন্দের কারণে সড়কে চলাচলের কোনো উপায় নেই। অসুস্থ মানুষ নিয়ে সড়কে চলাচল করলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে। মানুষ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যায়। দ্রুত সড়কটির সংস্কারকাজ সমাপ্ত করার দাবি জানাই।
সড়কের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন কালবেলাকে বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে মোট কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫৫ ভাগের বেশি। যদিও ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সড়কটির কাজ শেষ হয়ে যাবে আশা করি।