

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা বিজয় উদযাপনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাগানো হয়েছে রঙিন বাতি। আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করতে চলছে প্রশাসনের নিরলস কাজ। কিন্তু ভালো নেই উপজেলার পৌর শহরের ফুল সামগ্রী বিক্রেতারা। এ বছর দোকানগুলোতে দেখা নেই আগের মতো পুষ্পস্তবক বানানোর হিড়িক।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে কসবা পৌর শহরের ফুলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, রাত পোহালে বিজয় দিবস থাকা সত্ত্বেও অনেক দোকানেই ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস উদযাপনের একটা সপ্তাহ আগ থেকেই উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুষ্পস্তবক অর্ডার করতে। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত একাধারে চলত ফুল তৈরির কাজ। ক্রেতা ও অর্ডারের চাপে হিমশিম খেতেন ব্যবসায়ী ও কারিগররা। এ বছর সেই চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বিজয় দিবসের আগ মুহূর্তেও কসবার ফুলের দোকানগুলোতে নেই প্রত্যাশিত ব্যস্ততা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফুল বিক্রি কমে যাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোই ফুল ব্যবসায়ীদের আয়ের বড় একটা উৎস।
কসবা বাজারের গুলশান ফুল দোকানের মালিক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, প্রতি বছর শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসকে ঘিরে ভালো অর্ডার পাওয়া যেত। কিন্তু এবার বেচাকেনা নেই বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম, অর্ডারও হাতে গোনা। অর্ডার কমে পাওয়ায় ফুলও এনেছি কম।
ফুল ব্যবসায়ী মায়ের দোয়া পুষ্প বিতান ও সাজঘরের মালিক ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এবার ফুলের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা খুবই কম। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে দোকানে কাজের চাপ থাকত, কিন্তু এবার বিক্রি না হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছি।
ফুল বিক্রির এই মন্দাভাবের প্রভাবে ফুলের দোকানের কারিগররাও এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গুলশান ফুল দোকানের এক কারিগর আরিফ মিয়া বলেন, আগে বিজয় দিবস এলেই রাত-দিন কাজ করতে হতো। তখন কাজের চাপে অবসর পাওয়া যেত না কিন্তু এবার কাজই নেই, অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
আরেক কারিগর আক্তার হোসেন বলেন, আগের বছরগুলোতে এই সময়ে ফুল বানাতে হিমশিম খেতে হতো। এবার দোকানে বসে থাকতে হচ্ছে। কেন এমন অবস্থা তৈরি হলো, সেটাও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা বাড়ে। তবে এবার সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচির সংখ্যা তুলনামূলক কম। পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে অনেকেই পিছিয়ে থাকছেন। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাওয়ায় ফুলের বাজারে এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে ফুলের বাজারের মন্দাভাব গিয়ে পড়বে ফুল চাষি বা উৎপাদনকারীদের ওপর। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনেকের জন্য ফুলের ব্যবসা ও এই পেশায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
মন্তব্য করুন