অনুসন্ধান, তদন্ত, মামলা রুজু কিংবা চার্জশিট দেওয়া—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গুরুত্বপূর্ণ এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা কমিশনের হাতে। ফলে কমিশন না থাকায় এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে দুদক। দুদকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৮০টি অভিযোগ আসে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুসন্ধানের অনুমোদনও নিতে হয় কমিশন থেকে। ফলে কমিশন নিয়োগ যত বিলম্বিত হবে, দুদকে অভিযোগের স্তূপ তত উঁচু হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ হাজারের বেশি প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে।
একই অবস্থা হয়েছে প্রায় প্রতিটি কমিশন নিয়োগের সময়। ২০০৭ সালে একবার দীর্ঘদিন কমিশনহীন ছিল দুদক। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুদক এভাবেই অচল হয়ে থাকে। তাই এবার সংস্কার কমিশনের কাছে এর একটি সুরাহা চান দুদক কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে প্রাপ্ত নতুন অভিযোগ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের অনুমোদন নিতে হয় কমিশন থেকে। গত ২৯ অক্টোবর পুরো কমিশন পদত্যাগ করায় নতুন করে আর কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়নি। অনুসন্ধান শেষে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলা দায়েরের অনুমোদন নিতে হয় কমিশন থেকে। এরপর মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে চার্জশিট দাখিলের আগেও অনুমোদন নিতে হয় কমিশন থেকে। অনুসন্ধান ও তদন্ত চলাকালীন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পেলে এবং সেসব সম্পদ হাতবদল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সেগুলো ক্রোক বা ফ্রিজ করে দুদক। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী, দুদক থেকে প্রথমে প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে ইমিগ্রেশন ব্লক করে কোর্টের মাধ্যমে আদেশ করা হয়। সবকিছুরই অনুমোদন নিতে হয় কমিশন থেকে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের সংক্রান্ত অনুমোদনও দেওয়া হয় কমিশন থেকে। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের অনুমোদন করে কমিশন। গত ২৯ অক্টোবর থেকে কমিশন না থাকায় বন্ধ হয়ে আছে দুদকের অতি গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজ। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে আছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে প্রাপ্ত বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্রয়ের অনুমোদন এবং আগামী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৪ উদযাপনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবসের কার্যক্রমবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত আটকে আছে।
এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, দুদকের সব ক্ষমতা কমিশনের হাতে। যে কারণে কমিশন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দুদকের মহাপরিচালকদের হাতে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। যাতে কমিশনে কোনো ধরনের শূন্যতা তৈরি হলে মহাপরিচালকরা সংস্থাটিকে চালিয়ে নিতে পারেন।
দুদকের সাবেক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দুদকের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয় কমিশন থেকে। তাই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন নিয়োগ দিয়ে দুদককে শক্তিশালী করা উচিত।