সদ্য বাতিল করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষ বিধানের আওতায় বেসরকারি খাতে ৯১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ পর্যালোচনায় ছয় সদস্যের কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদকরা কয়েক মাস ধরেই বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। আলোচনা চলা অবস্থায় এ ধরনের কমিটি গঠনকে বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টরা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পর্যালোচনার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বকেয়া বিল পরিশোধের উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা প্রকারান্তরে গ্রাহকের ওপরই প্রভাব বিস্তার করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গতকাল মঙ্গলবার গঠন করা ট্যারিফ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক কামরুল আহসানকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পাওয়ার সেলের বিদ্যুৎ খাতের সংস্কার কমিটি ও কনসালটেন্ট এবং আর্থিক মডেলিং বিশেষজ্ঞ তোহা মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনজুর আলম, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (অর্থ) অঞ্জনা খান মজলিশ, পরিচালক (ক্রয় পরিদপ্তর) নান্নু মিয়া এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন-১) মোহাম্মদ সোলায়মান।
কমিটির এক সদস্য কালবেলাকে বলেন, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশেষ আইনের অধীনে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো (পিপিএ) পর্যালোচনা করব। পর্যালোচনা শেষে সরকারের কাছে সুপারিশ দেব।
তিনি বলেন, বিশেষ আইনে করা কেন্দ্রগুলোর ট্যারিফ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা আছে যে, তারা বেশি অর্থ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত কালবেলাকে বলেন, ট্যারিফ বেশি নিচ্ছে—এমন কয়েকটি কোম্পানি থাকতে পারে। আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি, ট্যারিফ পর্যালোচনা করেন। এটা ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি সরবরাহ ঠিক রাখতে বকেয়া বিলও পরিশোধ করতে হবে। না হলে বেসরকারি খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সংস্থা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চাওয়া হয়। এই ঋণ চাওয়ার পর বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ বেশি বলে মন্তব্য করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এজন্য ট্যারিফ পর্যালোচনা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পর্যালোচনা কমিটি সদ্য বাতিলকৃত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর (সংশোধিত ২০২১) অধীন সম্পাদিত ক্রয় চুক্তিগুলোর ট্যারিফ কাঠামো পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদান করবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর (সংশোধিত ২০২১) আওতায় সম্পাদিত ফার্নেস অয়েলভিত্তিক (এইচএফও) বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিগুলোতে ফের নেগোশিয়েশন ও সুপারিশ প্রদান করবে।
গত ৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ সচিবকে বিপ্পার দেওয়া এক চিঠিতে বর্তমান মোট বকেয়ার অর্ধেক আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধের জন্য বলা হয়। বর্তমান বকেয়ার পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা অর্ধেক পরিশোধ করা না হলে গ্রীষ্মে ও রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবারও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংগঠনটির নেতারা।