বিশ্বের বৃহত্তম প্যাকেটজাত খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নেসলে খরচ কমানো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাঁটাইয়ের এ সংখ্যা নেসলের মোট প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার কর্মীর ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) কোম্পানির নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিলিপ নাভরাটিল এই ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাভরাটিল জানান, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ খরচ সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার) নির্ধারণ করেছে।
নেসলের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিক্রির বড় অংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে ভোক্তাদের আস্থার দুর্বলতা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁকের পরিবর্তিত প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করছে।
নাভরাটিল আরও বলেন, ‘বিশ্ব বদলাচ্ছে, তাই নেসলেকেও দ্রুত বদলাতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে নেসলের শেয়ারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে বরখাস্ত হওয়া লরেন্ট ফ্রেইক্সের স্থলাভিষিক্ত হন নাভরাটিল। এর দুই সপ্তাহ পর চেয়ারম্যান পল বুলকে আগাম অবসরে যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন ইন্ডিটেক্সের সাবেক প্রধান পাবলো ইসলা।
আগামী দুই বছরে ১২ হাজার অফিসকর্মী ছাঁটাই করা হবে জানিয়ে নাভরাটিল জানান, পাশাপাশি উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইন খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরও চার হাজার কর্মী কমানো হবে। এসব উদ্যোগকে তিনি ‘কার্যকারিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
কিটক্যাট, নেসপ্রেসো ও ম্যাগির মতো ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন পণ্য প্রস্তুতকারক নেসলে বর্তমানে বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও শেয়ার পতনের বিরুদ্ধে লড়ছে। মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি, ব্যয় ও ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের চাপও তীব্র হয়েছে।
সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের চিত্র ছাঁটাইয়ে বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে। বার্নস্টেইন বিশ্লেষকরা এক নোটে বলেন, কর্মী ছাঁটাই সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
তৃতীয় প্রান্তিকে রিয়েল ইন্টারনাল গ্রোথ (আরইজি) সূচকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি। এটি নতুন সিইও নাভরাটিলের জন্য কিছুটা ‘দম ফেলার’ তৈরি করেছে।
নাভরাটিল বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো আরআইজিনির্ভর প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। আমরা এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলছি, যেখানে কর্মদক্ষতা পুরস্কৃত হবে, বাজার হারানো মেনে নেওয়া হবে না এবং জেতাই হবে লক্ষ্য।’
কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের পানি ও প্রিমিয়াম বেভারেজ ব্যবসা এবং স্বল্প প্রবৃদ্ধির ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে কৌশলগত পর্যালোচনা চলছে।
নেসলে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ব্যবসায়িক দিকনির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের তুলনায় অর্গানিক পণ্য বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছে।
এই প্রান্তিকের মধ্যে সুইস পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে, যা আগস্টে কার্যকর হয়।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মোট তিন বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ সাশ্রয়ের বেশির ভাগই ২০২৬-২৭ সালে অর্জিত হবে, তবে ২০২৫ সালেই প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ফ্রাঁ সাশ্রয়ের লক্ষ্য রয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে অর্গানিক বিক্রয় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্লেষকদের অনুমান করা ৩ দশমিক ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি। কফি ও কনফেকশনারি খাতে দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্রি বাড়লেও, চীনে বিক্রি কমেছে; যা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা টেনে ধরেছে।
নেসলের সিএফও আনা ম্যানজ বলেন, ‘চীনে আমরা বিক্রি বাড়াতে মনোযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু ভোক্তা চাহিদা তৈরিতে যথেষ্ট কাজ করিনি। এখন আমরা সেই ভুল সংশোধন করছি, বিতরণব্যবস্থা আরও কার্যকর করছি, চাহিদা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।’
মন্তব্য করুন