শহরে নেই কোনো বিনোদন কেন্দ্র। তাতে কী? লক্ষ্মীপুরে রায়পুরের মেঘনার ভাঙনকবলিত এলাকাই যেন পরিণত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রে। গত ২০ বছরে সেখানে গড়ে উঠেছে বেশকিছু রেস্তোরাঁ এবং ভ্রমণ উপযোগী পরিবেশ। ফলে যে কোনো উৎসব আনন্দে হাজারো মানুষ বেড়াতে যান। সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর চরবংশী ইউপির চরইন্দ্রুরিয়া এলাকার আলতাফ মাস্টার ইলিশাঘাটের দুই কিলোমিটার এলাকায় ঈদের দিন বিকেলে মানুষের ঢল নামে। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে গেছেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ বেড়িবাঁধে এখন পর্যটকের ঢল। একটু দূরের জিনের মসজিদ, দালালবাজার দিঘিরপাড়, জমিদার বাড়ি এবং রামগতির আলেকজেন্ডার নদীর পাড়েও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন ঘুরতে আসা মানুষ। কেউ মাছ শিকারের দৃশ্য দেখছেন আর কেউ মেঘনায় জলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হচ্ছেন। আবার সেই স্মৃতি ধরে রাখছেন মোবাইলের ক্যামেরায়। পাশপাশি বাঁধের পাশে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ ও ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। অনেকে সাঁতার কাটছেন। বাঁধের পাশের চরবংশী, চরইন্দ্রুরিয়া, চরজালিয়া, চরপাঙ্গাসিয়া ও চররমনী এলাকাজুড়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
রায়পুর শহর থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আলতাফ মাস্টার ঘাটে এসেছেন আজাদ হোসেন। তিনি জানান, মেঘনার তীরে বাঁধের সৌন্দর্যের কথা শুনেছি। ছোট ছোট নৌকায় মাছ শিকার করতে দেখে বাচ্চারা আনন্দ পেয়েছে। সূর্যাস্তের দৃশ্যও মুগ্ধ করেছে।
রায়পুরের ইউএনও ইমরান খান বলেন, গত ৫৫ বছরে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি এই শহরে। এতে রায়পুরের প্রায় চার লাখ মানুষের উৎসব, পার্বনে যাওয়ার মতো কোনো যুতসই স্থান নেই। এ সুযোগে মেঘনার তীরে ইলিশ ঘাটে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ঈদের কারণে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ে। সেখানে স্বস্তিদায়ক যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশও থাকবে।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সাবেক এমপি এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, একসময় বেড়িবাঁধ এলাকায় এলে মানুষের কান্না আর অসহায়ত্বের কথা শুনতে হতো। ব্যক্তি উদ্যোগে ইলিশের আড়তের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলায় সেই মেঘনার পাড়ে এখন আনন্দ উৎসব হয়। পর্যটকরা আসছেন, উদ্যোক্তারাও ব্যবসা করছেন। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রায়পুরে পাউবোর রেস্টহাউস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র করতে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে মেঘনার তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্রবল নদীভাঙনের কবলে পড়ে। সরকারি উদ্যোগে তারপর আর কোনো বাঁধ হয়নি। তবে সে সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার মেঘনার তীরে ফসলি জমি কেটে ইলিশ মাছের বিশাল আড়ত করেন। সঙ্গে তীর ঘেঁষে বাঁধ নির্মাণ করে ঝাউগাছসহ বিভিন্ন গাছ লাগান। সেখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ বসান। দৃষ্টিনন্দন করতে লাইট দিয়ে সাজান পুরো এলাকা। ধীরে ধীরে সেটিই হয়ে উঠেছে রায়পুরাবাসীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র।
মন্তব্য করুন