দেশের ১৩তম নতুন সিটি করপোরেশন হিসেবে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে বগুড়া পৌরসভা। গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।
গণবিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১০ এপ্রিলে পাওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া পৌরসভা এলাকার ২১টি ওয়ার্ডের মৌজাগুলোকে নিয়ে বগুড়া সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো। এ বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনে জানানোর অনুরোধ করা হলো।
সিটি করপোরেশনের শর্ত পূরণ হলেও দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল বগুড়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসনের কাছে বগুড়ার উন্নয়নের দাবি ওঠে। পরে জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবনায় সিটি করপোরেশন গঠনের প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তি জারি ও স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন চেয়ে গত ১০ এপ্রিল চিঠি প্রদান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর ৪৫ দিন পর স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তা পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনের জন্য এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে। তাদের সম্মতি সাপেক্ষে সীমানা নির্ধারণ করে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বগুড়া পৌরসভাটি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণির মর্যাদা পায়। সময়ের সঙ্গে ২০০০ সালে এর আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। এরপর ২০০৪ সালে বর্ধিত করে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার করা হয়। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশনের জন্য আয়তন হতে হয় কমপক্ষে ২৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ; কিন্তু বাস্তবে এ পৌরসভায় বেশি জনবসতি রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের চেয়ে আয়তনেও বড়।
‘ক’ শ্রেণির এ পৌরসভাটি আয়তনে বড় হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য পৌরসভার মতোই বরাদ্দ পেয়ে থাকে। বগুড়া পৌরসভার সব মিলিয়ে রাস্তা আছে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা আছে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ২৮৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। কাঁচা সড়কগুলো অধিকাংশ পৌরসভার বর্ধিত এলাকায় রয়েছে। এ ছাড়া আরসিসি ১৫৫ কিলোমিটার, ইটপাড়া সড়ক ১৭০ কিলোমিটার, সোলিং রাস্তা রয়েছে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ পৌরসভার বার্ষিক আয় ৬০ কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
বগুড়া পৌর এলাকায় রয়েছে সিরামিক, হিমাগার ফাউন্ড্রিশিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ওষুধশিল্প (অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও হারবাল), অটো রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাইস ব্রান ওয়েল মিল, প্রাণিসম্পদ শিল্প, অক্সিজেন রিফাইনারি প্লান্ট, রিয়েলে এস্টেট শিল্প, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ চারটি সরকারি কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলসহ দুটি সরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমা, শপিং মল, ফোর ও ফাইভ স্টার হোটেল রয়েছে একাধিক।
বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার কালবেলাকে জানান, আওয়ামী লীগের সময়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলেন বগুড়াবাসী। তাই উন্নয়নের স্বার্থে বগুড়া পৌরসভাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বগুড়া একটি গ্রোয়িং সিটি। এটি আরও আগে হলে ভালো হতো। এটি দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি উল্লেখ করে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ‘বগুড়ার বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় জনগণের অভিমত এবং কারও আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব। সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা হবে। গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট হবে।’ বগুড়ার সিটি করপোরেশন ঘোষণা এখন শুধু সময়ের বিষয় বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন