নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন। ২৫ বছর বয়সেই শুনতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়। এখন তার বয়স ৫০ বছর। এতে জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায় তার।
দীর্ঘ বছর কারাগারে কাটিয়ে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। মুক্ত বাতাসে ফিরে নতুনভাবে পথ শুরু করলেন দুলাল হোসেন। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় মুক্তির পর নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল কর্তৃক উপহার হিসেবে দোকান পেয়েছেন তিনি।
দুলালকে পুনর্বাসন করতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের উদ্যোগে একটি মুদি দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দুলাল হোসেনকে নতুন ওই মুদি দোকানটি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় দুলাল হোসেনের স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। হত্যা মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন দুলাল। এরপর ২৩ বছর সাজা ভোগ করে চলতি বছরের গত ২ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন দুলাল হোসেন।
জেল থেকে মুক্ত হয়ে আগামী জীবনে কী করে চলবেন, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন দুলাল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের কাছে।
দুলাল হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। পরে শ্বশুরের দেওয়া হত্যা মামলায় ২০০২ সালে জেল হয় তার। সেই মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন জেল হয়। এরপর ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের (সিআইডি) হিসেবে কাজ করি। বন্দিরা গোপনে কি পরিকল্পনা করছে তা দেখাশুনা করতাম। পরে নওগাঁ জেলা কারাগারে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, মামলা চলাকালে আমাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উকিল খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে একসময় বিচারের আশা ছেড়ে দেন স্বজনরা।
দুলাল বলেন, একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসত না। মাঝে মাঝে মা কিছু টাকা দিয়ে আসলেও আমি তা খরচ করিনি।
স্থানীয়রা জানান, দুলাল তার জীবনের ২৩ বছর কারাগারে কাটিয়েছে। তার ভিটেমাটি কিছুই নাই। সে কোথায় থাকবে। যদি তাকে বসবাসের জন্য জেলা প্রশাসক একটি ঘর দেয়, তাহলে দুলাল সেখানে বসবাস করতে পারবে।
দুলালের মা আয়েশা বলেন, ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমার ছেলেকে একটি বাড়ি তৈরি করে দিলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, দুলাল হোসেন আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুলাল যেন নতুন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তাই তাকে মুদি দোকান উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন