আলাউদ্দিন চৌকিদার (৫৫)। পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। ভোলার চরফ্যাসনের চর মানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া গ্রামের এই বাসিন্দার রয়েছে মৎস্য খামার। প্রায় তিন যুগ বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত তিনি। ২০০৯ সাল থেকে বিগত সরকারের শাসনামলে ১৯টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় পুলিশ ছয়বার গ্রেপ্তার করেছে। স্ত্রীও রাজনৈতিক মামলায় ১৬ দিন জেল খেটেছেন। স্কুলছাত্র ছেলেকেও বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ২০১৩ সালে আলাউদ্দিনকে পিটিয়ে পা ভাঙা হয়। ২০২২ সালে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে দোয়ার আয়োজন করায় হামলার শিকার হন। ২০১৯ সালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় চার বছর সাজা হয়। তার মালিকানাধীন ৫০ একর জমির মাছের ঘের লুট করে বাঁধ কেটে দেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে ছাত্রদলের নেতা। তারাও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
তবে এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্যাতিত ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন চৌকিদারের দুঃখ এখনো শেষ হয়নি। গত ২১ এপ্রিল নতুন করে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অথচ আসামিদের কাউকে চেনেন না এই মামলার বাদী, এজাহারে করেছেন শুধু স্বাক্ষর। আলাউদ্দিন চৌকিদারের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনের সময় হাবিবুর রহমান নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি ওই মামলার ১৫৯ নম্বর আসামি।
আলাউদ্দিন চৌকিদারের বড় ছেলে ফরিদ উদ্দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আরেক ছেলে হিরন আল তুহিন চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আলাউদ্দিন চৌকিদার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে করা ১৯টি মামলার ১৭টিতে খালাস পেয়েছি। দুটি মামলা এখনো চলছে। এর মধ্যে নতুন করে হত্যা মামলা হয়েছে। কে কীভাবে এ মামলায় আমাকে আসামি করেছে, তা বুঝতে পারছি না। আওয়ামী লীগ আমলেও হয়রানির শিকার হয়েছি, এখনো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।’
মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী মীম আক্তার আঁখি বলছেন, তিনি আসামিদের কাউকে চেনেন না। শুধু এজাহারে সই করেছেন। আসামিদের নাম দেওয়াসহ সবকিছু করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার সোহেল মিয়া বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের তথ্য মিথ্যা। মামলা করার কোনো এখতিয়ার আমাদের নেই। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নাম ব্যবহার করে ভুল তথ্য দিয়ে কেউ প্রতারণা করছে। মাসুমা আক্তার শিল্পী বা আজিজ সালমান নামে আইনজীবীর সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আর যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে মামলাগুলোর তদন্ত করছি। তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারকি করছেন। কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না হলে তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন