বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের জন্য ১০০টি যাত্রীবাহী বগি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নেওয়া ১ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয়েছে নামমাত্র। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে অথচ পুনর্বাসন সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৯.৭১ শতাংশ। ফলে একদিকে সময়মতো কোচ প্রস্তুত না হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে গৃহীত এ প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সৈয়দপুর কারখানায় ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ কোচ পুনর্বাসনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার কথা ছিল। প্রকল্পে ৫০টি টুলস অ্যান্ড প্লান্ট, ৯৮টি বৈদ্যুতিক ও ৬৮৭টি যান্ত্রিক স্পেয়ার পার্টস ক্রয়, মেশিনারিজ স্থাপন, শ্রমিক ব্যয়, স্টেশনারি ও বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু জনবল সংকট, পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব এবং পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে যাত্রীবাহী বগির প্রাপ্যতা ও রেলওয়ের সার্বিক সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রকল্প পরিচালক দপ্তর জানায়, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৯.৭১ শতাংশ। পুরো তিন বছরে একটি কোচও পুনর্বাসন হয়নি। তবে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, এ চার মাসে ১২টি কোচ পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মার্চের শেষ দিকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এ প্রকল্পে রেলওয়ের প্রচলিত দুর্বলতাগুলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। যেমন কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাব, প্রকল্প পরিকল্পনায় ত্রুটি এবং সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়া।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশিদ বলেন, ‘তিন বছর শেষে ১০ শতাংশও কাজ শেষ হয়নি অথচ এত বড় বাজেট বরাদ্দ রয়েছে! এটা দায়িত্বশীলতার অভাব। এ ধরনের প্রকল্প যদি সময়মতো বাস্তবায়ন না হয়, তবে অর্থ ব্যয়ও বাড়ে। তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয়। এমন প্রকল্প ছাঁটাই করা উচিত।’
প্রকল্প পরিচালক শাহ সুফি নুর মুহাম্মদ বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান ও প্রক্রিয়া শেষ করতেই অনেকটা সময় চলে গেছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজ গতি পেয়েছে। এরই মধ্যে ১২টি কোচ পুনর্বাসন শেষ হয়েছে এবং মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ডিপিপিতে সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির সংস্থান থাকলেও বাস্তব প্রয়োজনে প্রশাসনিক অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিটি কোচে আধুনিক এলইডি লাইট সংযোজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘কাজ শুরু করতে অনেক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন পড়ে, যা দীর্ঘ সময় নেয়। বর্তমানে কাজের গতি বেড়েছে। আশা করছি, মেয়াদ বাড়ানো হলে নির্ধারিত সময়েই প্রকল্প শেষ করা যাবে।’
বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলে মোট ২৪৫টি কোচ (১২০টি ব্রডগেজ ও ১২৫টি মিটারগেজ) জেনারেল ওভারহোলিং অবস্থায় রয়েছে। রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪০ থেকে ২০৪৫ সালের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের সব মিটারগেজ লাইন ধাপে ধাপে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে।
মন্তব্য করুন