ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এদিন সরকার পতনের একদফা নিয়ে গাজীপুরে রাস্তায় নেমে আসেন ছাত্র-জনতা। তীব্র প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে প্রশাসন। তবে এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন অনেক ছাত্র-জনতা। সেদিনের সংগঠকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-জনতার অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য এখনো পুরোপুরি পূর্ণ হয়নি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫ আগস্ট রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। কারফিউ অমান্য করে চলে বিক্ষোভ, মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। জেলার চান্দনা চৌরাস্তা, সফিপুর, মাওনাসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ছাত্র-জনতা।
এক পর্যায়ে আন্দোলন চলাকালে সফিপুর ও মাওনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় সফিপুরে আনসার বাহিনীর গুলিতে ছয়জন ও মাওনা এলাকায় বিজিবির গুলিতে ছয়জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক ছাত্র-জনতা। সেদিনের সংঘর্ষে বুলেটবিদ্ধ হয়ে একটি চোখ হারান কলেজছাত্র ছাব্বির হোসেন।
কালিয়াকৈর উপজেলার বলিয়াদী গ্রামের চাকরিজীবী হেলাল উদ্দিনের বড় ছেলে ছাব্বির পড়ালেখা করতেন কালিয়াকৈর কলেজে। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
ঘটনার বীভৎসতার বর্ণনা দিয়ে ছাব্বির হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট ওপর মহলের নির্দেশে সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে গুলি ছোড়েন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। এসময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। ছাত্র-জনতার ইটপাটকেলের জবাবে তারা নির্বিচারে গুলি করতে থাকেন। এ সময় তিন নম্বর গেটের সামনে ছাব্বিরকে লক্ষ্য করে গুলি করেন একজন আনসার সদস্য। গুলিটি তার বাঁ চোখে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে তানহা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এক মাস চিকিৎসার পর ক্ষতিগ্রস্ত চোখটি উপড়ে ফেলেন চিকিৎসকরা। তবে এখনো বুলেট রয়ে গেছে চোখে।
ছাব্বির হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ চোখ ও মাথায় এখনো তীব্র যন্ত্রণা হয়। চিকিৎসা করতে মাসে খরচ হয় চার হাজার টাকা। চাকরিজীবী বাবার সংসারে তার চিকিৎসা এখন অনেকটা কষ্টকর।
তিনি দাবি করেন, তাকেসহ জুলাই আহতদের পুনর্বাসন দরকার। দরকার যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি যাতে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া যায়। এ ছাড়া জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার ত্বরান্বিত করতে সরকারের কাছে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন সেদিনের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। তারা বলছেন, একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য বিচার, সংস্কার ও সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বস্তাপচা রাজনীতি থেকে সব দলকে বের হয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক পার্টির মহানগর প্রতিনিধি মুসা ইব্রাহীম বলেন, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই বিপ্লব হয়েছে, তা কেমন যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তবে এনসিপি দাঁড়িয়ে থাকায় রাজনৈতিক দলে স্থিতিশীলতা রয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিচার, সংস্কারে সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন