

মাত্র ৩০ আসনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে গেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জন্য তা আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার পোস্টটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো।
মাত্র ৩০ আসনে এনসিপি জামাতের সঙ্গে জোটে গেলে ব্যাপারটা আত্মঘাতী। এখন পর্যন্ত এনসিপি-জামায়াতের আসন সমঝোতা হচ্ছে না। যা হচ্ছে সেটা নির্বাচনী জোট এবং নির্বাচনী জোটে জোটের নমিনেশনের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। এর ফলে নানাবিধ ক্রাইসিসে এনসিপি পরে।
১. প্রথমত এনসিপি অলরেডি ১২৫ আসনে নমিনেশন কনফার্ম করেছে। প্রত্যেকেই তাদের এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছে, খরচ করেছে। মহা ধুমধামে এনসিপি নমিনেশন ফরম বিক্রি করে যাচাইবাছাই করে এদের নমিনেশন দিয়েছে। এদের মাঝে মাত্র ৩০ জন নমিনেশন পেলে বাকিরা বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। পার্টি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যারা একবার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছে, তারা যদি নির্বাচন না করতে পারে তাহলে এলাকায় তাদের রাজনীতি থাকবে না। ফলে এনসিপির নিজস্ব সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙেচুরে যাবে।
২. এনসিপিকে নিয়ে বাজারে এতদিন চলে আসছে তারা জামাতের ‘বি’ টিম। এখন নির্বাচনী আসন সমঝোতারও ঊর্ধ্বে উঠে জোটে গেলে সেটা স্টাবলিশ হয়ে যাবে। এনসিপি আর কখনো স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা আকারে দাঁড়াতে পারবে না। মানুষ আর কখনো বিশ্বাস করবে না, জামায়াত আর এনসিপি আলাদা। ফলে এনসিপির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক যাত্রার ইতি টানা হয়ে যাবে। সে আর স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি করতে পারবে না।
সেই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থান ও তার রাজনীতিকে পুরোপুরি জামায়াতের কাছে হ্যান্ডওভার করে দেওয়া হবে। জুলাইকে আর কোনোদিন এনসিপি ক্লেইম করতে পারবে না। করলেও জনগণ সেটা আর বিশ্বাস করবে না। প্রত্যাখ্যান করবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আলাপ স্রেফ একটা স্ট্যান্ডবাজি হিসেবে দেখবে মানুষ। এইটা এনসিপির স্মরণে রাখা উচিত।
৩. এনসিপির একটা বড় গ্রুপ এন্টি জামায়াত। অনেকেই বাম ঘরানা এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, এই মানুষগুলোকে জামায়াতের বণ্টন করা আসনে রাখা হবে না। ফলে রাজনৈতিকভাবে কর্ণার হওয়ার আগেই এদের অনেকেই পদত্যাগ করবে। একইসঙ্গে এনসিপির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্রি অ্যান্টি জামায়াত-শিবির ফোর্স আকারেই পলিটিক্যালি দাঁড়িয়ে আছে। তারা ক্যাম্পাসে অকার্যকর হয়ে যাবে। যদি এমন জোট আগেই হতো, তাহলে শিবিরের সঙ্গে লিয়াজো করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন বাগসাস বেশ অনেকগুলো টপ পদ নিয়ে আসতে পারত। এই ছেলেগুলো অলরেডি বিট্রেড ফিল করতেছে। এদেরকে রাজনৈতিকভাবে একোমোডেট করা এনসিপির জন্য প্রায় অসম্ভব কাজ হয়ে যাবে। ক্যাম্পাসগুলোতে এনসিপির ছাত্রসংগঠন না দাঁড়ালে এনসিপি রাজনৈতিকভাবে হারিয়ে যাবে।
৪. একাত্তরে জামায়াতের ঐতিহাসিক দায়, সাম্প্রতিক মবোক্রেসি, বিভিন্ন ধর্ম ও কমিউনিটির বিরোধিতাসহ এসব ক্ষেত্রে জামায়াতের পজিশনকেই এনসিপির পজিশন হিসেবে গণ্য করা হবে। এনসিপিও জোটের ঐক্য নিশ্চিতে এসবে সমর্থন জানাবে। ফলত এনসিপির ইনক্লুসিভ পলিটিক্সের বয়ান শেষ হয়ে যাবে।
৫. এনসিপির জামাতপন্থি বেল্টের হাতে পার্টির নেতৃত্ব চলে যাবে। ফলে এনসিপির ক্ষেত্রে যে রিউমার ছিল, এই পার্টির নেতৃত্ব বাংলামোটর না বরং মগবাজারের শুরা কাউন্সিলের থেকে আসে সেইটা সত্য হিসেবে প্রমাণিত হবে। এর ফলে জামায়াতের বাইরে এনসিপির নিজস্ব কোনো রাজনীতি থাকবে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এনসিপির স্বতন্ত্র নির্বাচন করা উচিত। সম্ভব হলে এনসিপির নেতৃত্বের তিন দলীয় জোটে আরও দল বাড়ানো উচিত। আর যদি জামায়াতের সঙ্গে যেতেই হয় নির্বাচনী সমঝোতায় যাওয়া উচিত। ৩০ আসনে সমঝোতা হলে বাকি আসনগুলোতে এনসিপির ক্যান্ডিডেটরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে এলাকায় শক্ত সাংগঠনিক বেসমেন্ট তৈরি করতে পারে সেদিকে ফোকাস করতে হবে। এনসিপি যদি জামায়াতের সঙ্গে জোটে যায়, তাহলে এই দলটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে কিছু মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার খায়েশের জন্য।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো সারা দেশে এনসিপি কমপক্ষে ৫ শতাংশ ভোট পাবে সারা দেশে, যদি কেউ নির্বাচনে নাও যেতে। এটা হলেও কমপক্ষে ৫ জন উচ্চকক্ষে এমপি হতে পারতেছে। এইটা করতে পারলেও এনসিপি পলিটিক্যালি দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু জোট করলে এনসিপির রাজনীতি শেষ। এই ছোট্ট জিনিসটা যত দ্রুত এনসিপি বুঝবে, ততই ভালো। একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে এটুকুই বলছি যে, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
মন্তব্য করুন