অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে অনলাইনসহ সরাসরি বিভিন্ন বৈঠক পরিচালনা করছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে গত ৮ জুলাই রাজধানীর বসুন্ধরা সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে একটি গোপন বৈঠক ও নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা সম্প্রতি ঢাকার আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি সেদিন কীভাবে বৈঠক ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা উল্লেখ করেছেন।
ওই ঘটনায় ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার সোহেল রানা জানান, মেজর সাদেকুল হকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনের নির্দেশে তিনি সেদিন বসুন্ধরায় কে বি কনভেনশন সেন্টার ভাড়া করেন। সেখানে যে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তা হল ভাড়ার সময় কেউ জানত না। ওই হলে কীভাবে চেয়ার বসানো হবে, কে কোথায় বসবে, তা বলে দেন সুমাইয়া। তার কথামতো সবকিছুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। কেউ বৈঠকে যেন অযাচিত কথা না বলে, সেটাও দেখভাল করেন তিনি। এ হল ভাড়ার জন্য আরেক আসামি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পার (রিমান্ড শেষে কারাগারে) সহায়তা নেন তিনি।
সোহেল তার জবানবন্দিতে আরও উল্লেখ করেন, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটির দুই নম্বর গেট-সংলগ্ন মেজর সাদিক-জাফরিনের ফ্ল্যাট বাসায় নিয়মিত গোপন বৈঠক করতেন। সেখান থেকে তার সঙ্গে সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনের পরিচয় হয়। সুমাইয়া কনভেনশন হলের গোপন বৈঠক সম্পর্কে ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে স্বামীর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
সোহেল বলেন, ‘৮ জুলাই সুমাইয়া জাফরিন তার স্বামীর সঙ্গে বৈঠকে আসেন। ওইদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মিলে প্রায় ৩০০ জনের অধিক উপস্থিত হন। অনলাইনে যুক্ত হন আরও অনেকে। সুমাইয়া জাফরিন সবার উদ্দেশে বক্তব্যসহ কীভাবে ঢাকায় মানুষ এনে অস্থিতিশীল করা যায়, তা বলতে থাকেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলে সময়মতো ঢাকা অস্থিতিশীল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের এ বৈঠক চলে।’
এ ছাড়া এ মামলায় গত ১০ আগস্ট আরেক আসামি চালক লীগের সভাপতি মিলন শিকদার একই আদালতে স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ওই প্রশিক্ষণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতাকর্মীরা পরিচয় গোপন রেখে বিশেষ কোড ব্যবহার করে অংশ নেন। প্রশিক্ষণে পরিকল্পনা হয় শেখ হাসিনা নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ থেকে লোকজন ঢাকা শহরে সমবেত করবে এবং শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এরপর জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য সভায় শপথ নেওয়া হয়। ওই সভায় উপস্থিত সবাইকে প্রশিক্ষণ দেন মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।
এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট মেজর সাদিকুলের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তদন্ত কর্মকর্তা জেহাদ আদালতকে জানান, সুমাইয়া একটি বহুজাতিক কোম্পানির আঞ্চলিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামীর সঙ্গে তিনি এ গোপন বৈঠকে জড়িত। সভা চলাকালে কনভেনশন হলের সিসিটিভির ডিভিআরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এ মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৌরভ দেব ওরফে নয়ন, সন্দীপ থানা ছাত্রলীগ নেতা শামসুদ্দিন রনিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনা হেফাজতে মেজর সাদিকুলের বিচার চলছে।
মন্তব্য করুন