ইনসুলিন নিয়ে মানুষের আলোচনা-সমালোচনার অন্যতম কারণ ইনজেকশন। বাংলাদেশের ইনসুলিন গ্রহীতাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশেরও কম ব্যথা পান। তবে ব্যথার কারণ ভুল কৌশল প্রয়োগ। অনেকেই ভাবেন, ইনসুলিন ফ্রিজে রাখতে হবে; কিন্তু বর্তমানে বাজারে যেসব ইনসুলিন পাওয়া যায়, সেগুলো ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই। যদি ইনসুলিন ফ্রিজে রাখতে চান, তাহলে ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যথা লাগে। ইনসুলিন দেওয়ার সুঁই সর্বোচ্চ তিনবার ব্যবহার করা যাবে। তিনবারের বেশি ব্যবহার করলে ব্যথা লাগবে। বর্তমানে সুঁই এত ছোট যে, চামড়া ধরে ইনজেকশন দেওয়ার দরকার হয় না। চামড়া শক্ত করে ধরে ইনসুলিনের সুঁই দিতে গেলেও ব্যথা হবে।
অন্যদিকে, ইনসুলিনের দাম বেশি, ডোজ সামঞ্জস্য করতে হয়। অনেক রোগী ডায়াবেটিসের শুরুতে ইনসুলিন নিতে চান না, একবারে শেষ পর্যায় এসে বাধ্য হয়ে নেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ফলে ইনসুলিন নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গের পরীক্ষা জরুরি: ডায়াবেটিস হলে বছরে একবার ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গগুলো (কিডনি, চোখ, কান, নাক, হৃৎপিণ্ড, লিভার) পরীক্ষা করতে হবে। এসব অঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিসের যে কোনো জটিলতা শুরু হওয়া মানেই স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যাওয়া। সুতরাং জটিলতা শুরুর আগে তা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকে মৃত্যু হয়। বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এটা সহজেই অনুমেয় যে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিডনি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের রোগী কমবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে সন্তান: বাবার ডায়াবেটিস থাকলে ৩২ থেকে ৩৩ শতাংশ ছেলেমেয়ের আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। শুধু মায়ের থাকলে ছেলেমেয়ের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩৭ শতাংশ। বাবা-মা উভয়ের ডায়াবেটিস থাকলে ছেলেমেয়ের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক শ্রমবিহীন জীবনযাপনেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
প্যানক্রিয়াস ট্রান্সপ্লান্ট: ইনসুলিন প্যানক্রিয়াস বিটা সেল থেকে তৈরি হয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে দ্রুত ইনসুলিন শূন্য হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াস দিয়ে উপকার হয়। তবে এটা খুবই ব্যয়বহুল। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে প্যানক্রিয়াস দরকার হয় না। টাইপ ২-তে কিছু ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু টাইপ-২ রোগীদের একপর্যায়ে ইনসুলিন শূন্য হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে স্টেম সেল থেরাপিও দেওয়া যায়। তবে এটি এখনো সর্বজন স্বীকৃত নয়।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন