কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি

আবিদুল ইসলাম খান, তানভীর বারী হামিম ও তানভীর আল হাদী মায়েদ। ছবি : সংগৃহীত
আবিদুল ইসলাম খান, তানভীর বারী হামিম ও তানভীর আল হাদী মায়েদ। ছবি : সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। পোস্টার বিলি ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা শুনছেন এবং নিজেদের ইশতেহারে তাদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করছেন।

ডাকসুতে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা। গণরুম, গেস্টরুম কালচার এবং ছাত্রলীগের আমলে বেড়ে যাওয়া সব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি দূর করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনা, ভালো ফল, গবেষণা ও জরুরি সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব।

তিনি বলেন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা যথাযথ সুযোগ-সুবিধার অভাবে একাধিক টিউশনি করতে হয়, যার ফলে পরীক্ষার ফল প্রভাবিত হয়। আমরা শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন-ক্যাম্পাস কাজের সুযোগও তৈরি করব।

আবিদ আরও বলেন, জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি; সেই চেতনা ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব এবং তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, তা নিশ্চিত করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। নারীদের জন্য ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করা হবে এবং ছেলেমেয়েদের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কারণ এই ক্যাম্পাস সবার, এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য চলবে না। সর্বশেষে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপান্তরের চেষ্টা চালাব।

তিনি জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যথেষ্ট অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে, যা যোগ্যতার ভিত্তিতে গঠিত। এই প্যানেলে আদিবাসী, ক্রীড়াবিদ এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যাশা করছি শিক্ষার্থীরা আমাদের।

আবিদ আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা কারও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজন করলেও কিছু ফাঁকফোকর থেকে গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম জানিয়েছেন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছে এবং ছাত্রছাত্রীরা তাদের ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার আচরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে দেওয়ার পরও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্যই রাজনীতি করেছেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব ছিলেন এবং এমন কোনো আন্দোলন নেই যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ৫ আগস্টের পরও তিনি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করছেন।

তানভীর বারী হামিমের লক্ষ্য, জিএস পদে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায়ে কাজ করা, যাতে তারা শিক্ষা জীবনে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ পান। তিনি নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার এবং ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণভাবে নারীবান্ধব করার তৎপরতায় কাজ করবেন। পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন যাতে নারী শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন।

সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন থেকেই ছাত্ররাজনীতি করছি। দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। এসব কারণে ছাত্রছাত্রীরা আমাকে সমর্থন দেবেন বলে আশা করি। ছাত্রদলের মতো বড় একটি ছাত্র সংগঠন পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকায় আমি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারব।

আমরা কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাই এবং শিক্ষার্থীদের কী ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে চাই—সেদিকে লক্ষ্য রেখে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে, বড় পরিসরে বলতে গেলে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেবো। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ ও গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে এবং উন্নত গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়া হবে। নারীর আবাসিক হলে বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান করতে চাই এবং তাদের জন্য উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করব।

ক্যারিয়ার উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মো. আরকানুল ইসলাম রূপক বলেন, ক্যারিয়ার নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি করপোরেট ক্ল্যান, ক্যারিয়ার ক্লাবসহ আরও কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেই সময়ে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া আমার মূল কাজের অংশ ছিল। এই অভিজ্ঞতাকেই সামনে রেখে আমি এই পদে অংশ নিতে চাই। নির্বাচিত হলে অনুষদভিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে কাজ করব এবং শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকারী এমন পদক্ষেপ নেব, যা ইতোমধ্যেই আমার ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে এখানকার শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মডিউল ও কোর্সগুলো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রায়শই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যার কারণে বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হন।

তিনি বলেন, আমি চাই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্স ও মডিউলের সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো প্রণয়ন করা হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে কোনো বাধার সম্মুখীন না হন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার জন্য সার্টিফিকেট পাঠানোসহ প্রশাসনিক কাজ সহজ করতে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের অধীনে একটি অফিস গঠন করা হবে। এখানে একটি এক্সপার্ট প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যথাযথ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে শুধু প্রশাসনিক সহায়তা নয়, আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিকে একটি নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ছাত্র পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মো. সাইফ উল্লাহ্ (সাইফ) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আমি অনাবাসিক থাকার কারণে বাসে আসা-যাওয়া করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সমস্যাগুলো নিজে উপলব্ধি করেছি। বিজয়ী হলে প্রথমেই আমি বাসের অপ্রতুলতা দূর করার জন্য ট্রিপ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেব। এ ছাড়া বাসের ফিটনেসসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান ও তদারকির জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এবং উৎসবের সময় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য বিশেষভাবে বাসের ট্রিপ বরাদ্দ থাকবে। নারীদের হলগুলোকে একটি নির্দিষ্ট রুটের মধ্যে সংযুক্ত করে ২০ সিটের ইলেকট্রিক কার্ট চালু করা হবে, যা সার্বক্ষণিক একই রুটে চলাচল করবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পূর্ণাঙ্গ শাটল ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করা যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী এহসানুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা-সহায়তা, ডিজিটাল সেবা এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এখনো অপ্রতুল, যার ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বাস্তবতা পরিবর্তন করাই আমার অঙ্গীকার। আগামী এক বছরের মধ্যে হলের যাবতীয় সেবা অটোমেশন করা হবে এবং সব ধরনের পেমেন্ট ক্যাশলেস ব্যবস্থা চালু করা হবে।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসজুড়ে বিনামূল্যে হাইস্পিড ওয়াইফাই নিশ্চিত করা হবে। উন্নত গবেষণাগার সুবিধা বৃদ্ধি এবং গবেষণা পেপার প্রকাশে সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া এআই, কোডিং এবং ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে। নিয়মিত কোডিং কমপিটিশন ও হ্যাকাথন আয়োজন করা হবে। দলমতনির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করা হবে। আমি বিশ্বাস করি, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা সম্ভব।

সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আবু হায়াত মো. জুলফিকার জেসান বলেন, সৃষ্টিশীল সাহিত্য নির্মাণ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। আমার ভিশন হলো একটি মুক্ত, প্রগতিশীল ও বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মেধার পরিচর্যা করা।

তিনি বলেন, নিয়মিত আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃহল ও আন্তঃবিভাগীয় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ হয় এবং হলে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। এ ছাড়া ত্রৈমাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশ, প্রতি বছর ‘তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ উৎসব’, প্রতি মাসে অন্তত একটি ফিল্ম উৎসব, চারুকলা ইনস্টিটিউটে বার্ষিক চারু উৎসব আয়োজন এবং শিল্পীদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় নতুন সাংস্কৃতিক বয়ান গড়ার লক্ষ্যে একটি ‘কালচারাল কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো সংস্কার করা হবে।

সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক বলেন, বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী একটি ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ তৈরি করা হবে এবং সময়ানুযায়ী সেই চাহিদাগুলো পূরণের চেষ্টা করা হবে। শিক্ষার্থীদের তথ্যাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করব। অনাবাসিক মেয়েদের হলে রেস্টরুমের ব্যবস্থা, এক হলের মেয়েরা যাতে অন্য হলে দেখা করতে যেতে পারে এবং পরিবারের সদস্যরা যেন হলে আসতে পারে—এসব দাবিও বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, Social Welfare Club-এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সামাজিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে। ভর্তির পর বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বুলিং ও হ্যারাসমেন্ট সচেতনতায় কর্মশালা আয়োজন করা হবে এবং তাদের সুরক্ষায় অনলাইন ও অফলাইন কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হবে। এ ছাড়া Animal Welfare Team গঠন করে ক্যাম্পাসের পশুপাখির নিয়মিত চিকিৎসা ও ছুটি খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এক বছরের সময়সীমা শেষে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে পরবর্তী ডাকসুর পথ সুগম করে শিক্ষার্থীদের কাতারে ফিরে আসব।

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে আমি কাজ করব। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আরও গভীর জ্ঞানচর্চার জন্য ক্যাম্পাসে একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণীয় করে রাখতে টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত সড়কটি ‘জুলাই সাহসিকা সরণি’ হিসেবে নামকরণ করা হবে। এ ছাড়া একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ২৪-এর শহীদদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী চিম চিম্যা চাকমা বলেন, আমি নিজে একজন খেলোয়াড় হিসেবে খেলার মাঠের সব প্রতিকূলতা কাছ থেকে অনুভব করেছি। তাই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে শুরু থেকেই এসব সমস্যার সমাধানের পথ সহজ করতে আমি এই পদে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার প্রথম পরিকল্পনা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাথলেটকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা, যেখানে তারা নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবেন এবং চর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ গড়ে উঠবে। এজন্য একটি স্পোর্টস ক্লাব গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সংগঠিতভাবে ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে। সর্বশেষে, আমি চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনকে কেবল নিজে অর্জন দিয়ে এগিয়ে নিতে; বরং নতুন শিক্ষার্থীসমাজকেও ক্রীড়াঙ্গনমুখী করে গড়ে তুলতে।

কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা বলেন, আমার প্রথম লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা দূর করা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে ফুডকার্ট ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুডচেইন চালু রাখতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, ছেলেদের জন্য কমনরুম স্থাপন, পোর্টেবল চার্জারের ব্যবস্থা এবং গেমস রুম করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সবচেয়ে ইনোভেটিভ উদ্যোগ হিসেবে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থীদের আর ভোর ৫টায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না; সবাই অ্যাপের মাধ্যমে জানবে কোন সিট ফাঁকা আছে। এ ছাড়া লাইব্রেরি ও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে কোন বইগুলো কোথায় রয়েছে এবং সেই বইয়ের অনলাইন ভার্সন কোথায় পাওয়া যাবে, সবই অ্যাপের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।

মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মু. মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, নির্বাচিত হলে আমার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এর মধ্যে থাকবে—গেস্টরুম ও গণরুম সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসীদের বিচার কার্য নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য লিগ্যাল এইড সেল গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, আমি ’৭৩ সালের আদেশ ও ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে চাই এবং প্রতিবছর ডাকসুসহ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে চাই। আমার লক্ষ্য হলো এমন কাজ করা, যেখানে আমার পদের মেয়াদ এক বছর হলেও আমার কাজের প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে সারাজীবন স্থায়ী হবে এবং মানুষ আমাকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আনোয়ার হোসাইন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার দায়িত্ববোধ থেকেই আমি স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সুবিধা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস এবং সবুজ, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমি বিশ্বাস করি, একটি সুস্থ প্রজন্মই আগামী দিনের শক্তি।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাড়ির সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একই ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে পালালেন দুই জা

হয়নি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, বিএনপির দুগ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা

মেডিকেল রিপোর্ট না থাকায় লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহার

প্রবাসীদের সুরক্ষায় প্রবাসীবন্ধু বিমা, প্রথম অর্থ পেলেন টাঙ্গাইলের আশিক

চলমান সহিংসতায় সরকারের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে‎ জবিতে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ

এবার শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন ট্রাম্প

জিনের বাদশা সেজে নকল স্বর্ণের পুতুল বিক্রি, আটক ৫

প্রেমের ফাঁদে ফেলে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার

‘হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ অপরিহার্য’

মহেশখালী- মাতারবাড়ীতে নতুন শহরের জন্ম হবে : প্রধান উপদেষ্টা

১০

ভারতে পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশিদের থাকার নতুন নিয়ম

১১

ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৪৫

১২

অবাধ নির্বাচন হলে ডাকসুতে ছাত্রদলই বিজয়ী হবে : রিজভী

১৩

পদ্মার দুই ইলিশ ১৬ হাজারে বিক্রি

১৪

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালা প্রকাশ

১৫

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন দুই দলের একাদশ

১৬

স্ত্রী কালো বলে পুড়িয়ে মারেন স্বামী, মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত

১৭

মাল্টি-ডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো হবে সিলেটে

১৮

ডাকসু নির্বাচনে ‘আবিদুলের জনপ্রিয়তা’ নিয়ে কথা বললেন সামান্তা

১৯

শনিবার সব নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ

২০
X