জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ২০২৪ সালে। সেই সময় বহু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে গোলাগুলির ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন এক গুলিবিদ্ধ ছাত্র। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আসামির তালিকায় আছেন একজন মৃত ব্যক্তি। তিনি হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। যিনি মারা গেছেন আরও চার বছর আগে ২০২১ সালে। ১৫০ নম্বর আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তিনি। বাদীর দাবি, হয়তো কোনো কারণে ভুলে নাম যোগ হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে নালিশি মামলার আবেদন করেন চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ কে এম নুরুল্লাহ। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানার বগাদিয়া বিন্নাগাঁও গ্রামের মো. রতন মিয়ার ছেলে।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চট্টগ্রামে এনে ৩৬ দিনব্যাপী পুলিশ ও ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, শনাক্তকরণ সহজ না করতে তারা মোবাইল সিম নিজ এলাকায় রেখে চট্টগ্রামে এসেছিল। চিকিৎসা গ্রহণ ও নিরীহ, নিরপরাধ লোক যেন অন্তর্ভুক্ত না হয় এ কারণে মামলা করতে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়েছে। প্রত্যেক আসামির নাম তিনি বিশ্বস্ত সূত্র ও নিজস্ব যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
বাদী নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা উল্লেখ করে আদালতে বলেছেন, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নিউমার্কেটে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সহযোগী সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। এতে তিনিসহ ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। বাদীকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার দুই পায়ে এখনো বুলেট বিদ্ধ রয়েছে।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, সাবেক সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তারাও আসামির তালিকায় আছেন। ২৪ জন সাবেক নারী কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর নাম ১৫০ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদিও তিনি ২০২১ সালে মারা গেছেন।
মামলার বাদী এ কে এম নুরুল্লাহ বলেন, গত ৮ আগস্ট কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ঘটনার চার মাস পরে সুস্থ হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। মামলায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অপরাধ-প্রমাণ সম্পর্কে যথেষ্ট যাচাইবাছাই করেছি। মামলাটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় করেছি। ভুলে হয়ত মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসনিম আক্তার নিশাত বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ একজন ছাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৮২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফিজুল হক বলেন, মামলা রিসিভ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা রিপোর্ট দেবে। যারা জড়িত, তাদেরই রাখা হবে। নির্দোষ বা মৃত থাকলে বাদ দেওয়া হবে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল ফাহাদ বলেন, মামলা করার সময় প্রতিটি নাম বাদীকে প্রশ্ন করা হয়। মৃত ব্যক্তির নাম হয়তো টাইপ মিসটেক বা অন্যকোনো কারণে তালিকায় এসেছে। তদন্তের পর নিশ্চিতভাবে তাকে বাদ দেওয়া হবে। যতক্ষণ পিবিআই তদন্ত রিপোর্ট আসবে না, পূর্ণাঙ্গ মামলার তালিকা বলা যাবে না।
মন্তব্য করুন