শিক্ষক সংকটে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে। চলমান সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থীর ক্লাস পরীক্ষার জন্য বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। এরই মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ বছরের বেশি সময়ের জটে রয়েছেন। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান না করা গেলে আরও বেশি সময়ের সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও বিভাগটিতে ল্যাব, স্টুডিও, সেমিনার, শ্রেণিকক্ষসহ রয়েছে নানাবিধ সংকট, নেই বিভাগীয় কোনো লাইব্রেরি বা সেমিনার কক্ষ।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে শিক্ষকের জন্য চারটি পদ রয়েছে। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে রয়েছেন একজন করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খণ্ডকালীন শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনটি; কিন্তু বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন এবং একজন শিক্ষাছুটিতে আছেন। এ ছাড়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষককে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে পাঠানো হয়। তিনিও এখন শিক্ষাছুটিতে বিদেশে আছেন।
বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৪ জনের বেশি শিক্ষককে খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খণ্ডকালীন শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেন, ক্যাম্পাসে সশরীরে অনেক কম ক্লাস নেন তারা।
এদিকে করোনাকালীন জটিলতাসহ শিক্ষক সংকটের কারণে বর্তমানে বিভাগটিতে চলমান
২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই অন্তত ১ বছরের সেশনজটে পড়েছেন। শিক্ষক সংকট নিরসনে বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে একাধিকবার আবেদন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জবি ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি সাদমান শাহরিয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষক সংকট আমাদের বহুদিনের। বিগত ৭ বছরে ৪ জন ভিসি পরিবর্তন হয়েছেন, কিন্তু ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ হননি আমাদের বিভাগে। শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রশাসনের উদাসীনতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব ও ইকুইপমেন্টের অভাব, শিক্ষক সংকট নিয়ে আমরা বহুবার স্মারকলিপি জমা দিয়েছি, কাজ হয়নি।’
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগে বর্তমানে মাত্র দুজন নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন। যার ফলে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস, পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আগে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য তিন উপাচার্যের প্রশাসনে চিঠি দেওয়া হলেও সিদ্ধান্ত আসেনি। বর্তমান প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে বিভাগের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি এবং আমরা এটা আমলে নিয়েছি। নতুন পদ সৃষ্টি করার জন্য ইউজিসি বরাবর আবেদন করতে হবে। অর্গানোগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব এবং শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী।’
মন্তব্য করুন