মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে কাতারে। আবার সেই কাতারই হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল। তবে কাতার সাধারণত উপসাগরীয় অঞ্চলে কোনো সংঘাতের মধ্যে নেই। অথচ কাতারের আবাসিক এলাকায় মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) নজিরবিহীন হামলা চালায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল।
আঞ্চলিক সংঘাতের জেরে গেল জুনেও কাতারে ঘটেছিল হামলার ঘটনা। সেবার অবশ্য হামলা চালিয়েছিল ইরান। কাতারকে আগেভাগে জানিয়েই আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা করে তেহরান। এই বিমানঘাঁটিতেই রয়েছে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান। তবে কাতারে হামলার পর খোদ যুক্তরাষ্ট্রসহ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আরব মিত্ররা। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারকে হয়তো আঞ্চলিক সংঘাতে টেনে আনতে চাইছে ইসরায়েল। কারণ এক দশকে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছে দোহা।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ওই হামলার পর এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে জানায়, কাতারের রাজধানী দোহার ওই আবাসিক ভবনে নিখুঁত হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত ১৫টি যুদ্ধবিমান একটি টার্গেটে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ফায়ার সামিট নামের ওই অভিযানে ড্রোনও ব্যবহার করা হয় বলে জানায় ইসরায়েলি মিডিয়া। তবে এই হামলা লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের শীর্ষ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলী রাষ্ট্রদূত ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, পরের বার ঠিকই তাদের হত্যা করা হবে।
হামলার পরপরই কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় কাতার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি এই হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। দোহার এই হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে বলেও জানান তিনি। এরপরই কাতারের সামরিক ভান্ডার নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহের। কাতারের হাতে রয়েছে স্বল্পপাল্লার চীনা এসওয়াই-৪০০ ব্যালিস্টিক মিসাইল। তবে এগুলো হাজার মাইলের বেশি দূরে থাকা ইসরায়েলে পৌঁছাবে না।
২০১৭ সালে কাতারের হাতে ছিল ১২টি ফরাসি মিরাজ ২০০০ ফাইটার ও ৬টি আলফা লাইট অ্যাটাক জেট। স্থলবাহিনীর জন্য ছিল ফ্রান্সের তৈরি ৩০টি পুরোনো এএমএক্স-৩০ ট্যাংক। ২০২০ সাল থেকে পশ্চিমা অস্ত্র কেনায় মনোনিবেশ করে কাতার। ফ্রান্সের কাছ থেকে এফ-১৫কিউএ মডেলের প্রায় ১০০টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান অর্ডার করে দোহা। এ ছাড়া ইউরোফাইটার টাইফুন ও জার্মানির তৈরি মেইন ব্যাটেল ট্যাংক লেপার্ড টুএসেভেন প্লাস কিনতে অর্ডার করেছে দেশটি। এ ছাড়া কাতারের হাতে রয়েছে এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ ও প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম।
কাতারে সেই ২০২৪ সালের জুলাই থেকে অবস্থান করছে তুরস্কের ৬টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। কাতারের বৈচিত্র্যপূর্ণ ফাইটার বহরের সঙ্গে মিলে এই যুদ্ধবিমানগুলো ১ হাজার ফ্লাইট আওয়ারের বেশি সম্পন্ন করেছে। এতে কাতারের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে। তবে ইসরায়েলের হামলা সেই আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আর কাতার হয়তো রাজনৈতিক ও লজিস্টিক কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা করবে না। তবে আরব দেশগুলো এ নিয়ে ইসরায়েলের ওপর সমন্বিতভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
এর বাইরে একটি প্রশ্ন ইরান থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা কেন ইসরায়েলের ওই হামলা ঠেকাল না কেন। আর এতেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের দূরত্ব বাড়তে পারে। ফলে কাতার চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে। এর অংশ হিসেবে চীনের তৈরি এইচকিউ-২২ বা এইচকিউ-৯বি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে পারে কাতার। এমনটা ঘটলে অবাক হওয়ার মতো কিছু হবে না। কেননা ২০১৭ সালে সৌদি আরব কাতারের ওপর অবরোধ দেওয়ার পর দেশটি রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করেছিল।
মন্তব্য করুন