গত ২২ মে যশোরের অভয়নগরে স্থানীয় বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম সরদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কেন্দ্র করে উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামে মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৯টি পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মতুয়া পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক তো আছেই, তবে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক জলাবদ্ধতা। পানিবন্দি মানুষগুলো তিনবেলা আহার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় এবারের দুর্গাপূজা তাদের জন্য চরম বিলাসিতা। ৪ মাস ধরে তাদের দিন চলে মাছ শিকার ও শাপলা বিক্রি করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামের চারিদিকে পানি আর পানি। জলাবদ্ধতায় বাড়েধাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর যাতায়াতের একমাত্র বাহন তালগাছের ডোঙা। বসতঘরের বারান্দা থেকে রাস্তা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। গত মে মাসের ওই ঘটনার পর থেকে এখনো অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা রয়েছেন আত্মগোপনে। অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা জলাবদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সংবাদকর্মী দেখে বাড়েধাপাড়ার প্রশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, গত ২২ মে নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনা কেন্দ্র করে আমাদের মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৮টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাব, বছরের জন্য মজুত খাবার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে আমরা পাশের গ্রামে পালিয়ে যাই। পরবর্তী সময়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হলে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। অন্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে ওই মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।
মৃত পাগল চান বিশ্বাসের স্ত্রী সবিতা বিশ্বাস বলেন, দুর্গাপূজা শুরু হলেও উৎসব করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। কারণ, যে মৎস্যঘের নিয়ে দ্বন্দ্বে একজন খুন হলেন, সেই মৎস্যঘেরের মাছ লুট হয়েছে। এখন দিনের খাবার জোগাতে কষ্ট হয়। বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কেনার টাকা নেই। শিকার করা মাছ বাজারে বিক্রি করে চাল কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন শাপলা দিয়ে ভাত খেতে হয়। খুবই কষ্টে জীবন চলছে। এর মধ্যে উৎসব করার ইচ্ছা বা সামর্থ্য কিছুই আমাদের নেই।
মৃত গোপাল বিশ্বাসের ছেলে বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন ঘর নির্মাণসহ সংস্কার ও আসবাব দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কেউ খবর রাখে না। আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছি।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা পেয়েছিল। তবে দুর্গোৎসবে তাদের জন্য কোনো সহযোগিতা আসেনি। তারপরও পরিষদের উদ্যোগে তাদের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মতুয়া সম্প্রদায়ের অসহায় ওই পরিবারগুলোর জন্য পূজার মধ্যেই কিছু উপহার দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন