আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশিষ্টজনের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ বৈঠকে আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে ২৫ থেকে ৩০ জন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। যদিও বৈঠকে আট বিশিষ্টজন ছাড়া বাকিরা দর্শকের ভূমিকায় থাকবেন। সিইসি ও বাকি চার কমিশনার বিশিষ্টজনের পরামর্শ শুনবেন এবং তাদের দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ আমলে নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে এ বৈঠকে ইতিবাচক ফল নিয়ে সন্দিহান অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হলে ইসির এসব কর্মসূচি আশানুরূপ ফল নিয়ে আসবে না। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন তারা।
ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ হবে। আজকের সংলাপে চারজন আলোচক ও চারজন পর্যালোচক হিসেবে অংশ নেবেন। চার আলোচক হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। আর পর্যালোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবীর, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
প্রসঙ্গত, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে। সেদিন ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংলাপে অংশ নেন মাত্র ১৩ জন। নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ওই মার্চেই আয়োজিত পরের সংলাপে ৩৯ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ১৯ জন অংশ নেন। আমন্ত্রিতরা সংলাপে অংশ না নেওয়ায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার এক বছরের মাথায় ফের অংশীজনের মতামত নিচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারও সংলাপ হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। এ বিষয়ে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করার রোডম্যাপ অনুযায়ী যখন যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা তা নিচ্ছি। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। নির্বাচন নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন, নানা সময় নির্বাচন করেছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা ফিডব্যাক নেব। আমরা এতদিন যেসব কাজ করেছি, সেসব সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চাইব। নির্বাচন সম্পর্কে যদি তাদের কোনো ভালো সাজেশন থাকে, সেগুলো আমরা শুনব।
ইসির আজকের আলোচনায় পর্যালোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রথম যে সমস্যা, তা হলো রাজনৈতিক। সেটার সমাধান না হলে অনেক কিছুই হবে না। ইসির বৈঠক নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক কালবেলাকে বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে ইসির এসব আয়োজন কোনো কাজে দেবে না।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখে আগামী নির্বাচন করতে হলে তা করতে হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে।
মন্তব্য করুন