‘এত বছর হয়ে গেল, ভাই হত্যা মামলার বিচার পেলাম না। বিচার পাওয়ার জন্য শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে দৌড়াদৌড়ি করছি। ২০১৬ সালে ভাই হত্যার পর আমাদের বাড়িতে কয়েকবার হামলা হয়েছে। মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। তবু বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে বেঁচে আছি।’ এভাবেই আক্ষেপ করে কালবেলাকে কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জ শ্রমিক নেতা বাসুর ছোট ভাই জাসু শেখ।
২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান বাসু। এ ঘটনায় একই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ সদর থানায় বাসুর ছোট ভাই জাসু শেখ মামলা করেন। এরপর সাড়ে সাত বছর কেটে গেলেও বিচার না পেয়ে হতাশ বাসুর পরিবার।
জাসু শেখ বলেন, এ মামলার আসামি ইমাম শেখ জামিন পেয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। একজন হত্যা মামলার আসামি কীভাবে পালিয়ে গেলেন, এটা বোধগম্য নয়। এভাবে যদি আসামি পালিয়ে যান, তাহলে কীভাবে বিচার পাব? ভাইয়ের খুনিরা গোপালগঞ্জের মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ও নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন। আসামিরা বলেন, তারা এক দরজা দিয়ে ঢুকবেন, আরেক দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবেন। অপরাধীরা যদি এভাবে খালাস পেয়ে যান, তাহলে তো অপরাধ বেড়েই যাবে। অপরাধী যে দলের হোক না কেন, দ্রুত বিচার শেষ করা হোক।
২০১৬ সালের ১২ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক হযরত আলী ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট গোপালগঞ্জ দায়রা জজ মো. দলিল উদ্দিন অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়। এ ট্রাইব্যুনালে ২০ জনের বিচার চলছে। তাদের মধ্যে আসামি টুটুল শেখ ও রাশেদ শেখ পলাতক। শিশু হওয়ায় গোপালগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দুজনের বিচার চলছে। তাদের মধ্যে ইমাম শেখ জামিনে গিয়ে পলাতক। বিচার চলাকালীন আসামি আসাদ শেখ ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি মারা যান। এ ছাড়া অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
জামিনে থাকা আসামিরা হলেন বুলবুল শেখ, হেদায়েত শেখ, তফসির শেখ, ইমরান খাঁ, ইকবাল খাঁ, মিন্টু শেখ, ঝন্টু শেখ, কেনাই মোল্লা, প্রিন্স খান, রনি শেখ, আক্রাম আলী শেখ, কিবরিয়াল কাজী, হাবিল কাজী, আলিমুজ্জামান বিটু, বুলগান কাজী, সজিব শেখ, পনির শেখ, সিহাব শেখ ও শওকত শেখ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী পুর্ণেন্দু দেব নাথ কালবেলাকে বলেন, মামলাটির বিচার ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শেষ করতে পারেননি। এজন্য মামলাটি পূর্বের বিচারিক আদালতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে হাইকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আইন অনুযায়ী বিচার হোক, আমরা সেটাই চাই। এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিচার শেষে তারা খালাস পাবেন।