মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চলছে কোটি টাকার অবৈধ সিলিকা বালুর ব্যবসা। কৃষিজমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফসলি জমি নষ্ট করে বালু তোলায় পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে। তেল-গ্যাস পাইপের জাতীয় গ্রিড লাইন পড়েছে হুমকির মুখে। যে কোনো সময় বা ভূমিকম্পে এসব এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার ২৯টি সিলিকা বালু ছড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্টে এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ইজারা বন্দোবস্ত স্থগিতাদেশ দেন। পরে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার কার্যালয় থেকে ১৪২৮ বাংলা সনের বৈশাখ মাস থেকে ১৪২৯ বাংলা সনের ৩০ শে চৈত্র ২ বছরের জন্য ইজারা-সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। মাত্র ২৫ শতাংশ সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র ‘ইআইএ’ সংগ্রহের জটিলতার অজুহাতে গত দুই বছর রাজস্বের বাকি টাকা জমা না দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে শুধু দুই বছরে ভ্যাট, টেক্স, ইজারা মূল্যসহ এ বালুমহাল থেকে ইজারাদাররা সরকারের রাজস্ব ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৫৬২ টাকা ফাঁকি দিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে হিসাব করলে সরকার এ খাত থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। তারা পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতির কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। ১৪২৯ বাংলা সনে ওই দরপত্রের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ নতুন ইজারা দরপত্র কেন আহ্বান করছে না তা বোধগম্য নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য সংবাদ সংগ্রহে গেলে গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পোস্টের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি তানভীর ইসলাম কাওছারকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকের খালা খুশ ভানু বেগম বাদী হয়ে চিহ্নিত বালু দস্যু কাওছার, ফেরদৌস, কবির মোল্লা, নানু, দুদু, ফয়েজ ও আসলামের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করেন। এ মামলার কয়েকজন আসামি জেলহাজতে রয়েছে, বাকিরা জামিনে আছে।
কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘দেশের সম্পদ যদি আমরা ধ্বংস করিলাই, তাইলে তো আমরা একদম সর্বনাশ। গাঙ্গের চর ভেঙে জমিন ভেঙে যাইতাছে। সরকার থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।’
কৃষক হাসান মিয়া বলেন, ‘জমি থেকে বালু তুললে তো এই জমির মধ্যে আর কোনো ফলন হবে না। এ ব্যাপারে অভিযোগ করে আর কী হবে, অভিযোগ করে কোনো লাভ নাই। এ ব্যাপারে তো কোনো উদ্যোগ নাই, কেউ কোনো গুরুত্ব দেয় না।’
সিলিকা বালুর ব্যবসা সিন্ডিকেটের প্রধান কাওছার বলেন, ‘এগুলো কে করে আমি তো জানি না। আমার সম্পর্কে এই অভিযোগ কে দিয়েছে, অভিযোগকারী কে?’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন সমরু বলেন, ‘আমি বলব এগুলো প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে হচ্ছে। হঠাৎ একদিন অভিযান চালাল; এর পর তিন-চার দিন পর দেখা যায় আবার সব আগের মতোই চলছে। এতে বুঝা যায় প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করছে। এ কাজে আমরা ভীষণভাবে জর্জরিত, এতে দেশের ক্ষতি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা সমন্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, শ্রীমঙ্গলে সিলিকা বালু উত্তোলনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাহলে কীভাবে তারা বালু উত্তোলন করছে। আমরা চাই সরকার যদি লিজ দিয়েও থাকে তা সম্পূর্ণাভাবে বন্ধ হোক।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষিজমিতে শ্যালো
মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন শ্রীমঙ্গলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার। শ্রীমঙ্গলের ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল ইউএনও সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।