২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের মাথায় লেক লাগোয়া হলি আর্টিসান বেকারির চত্বর ছিল সবুজে আচ্ছাদিত। ছিল বিদেশি অতিথিদের ভিড়। ওই রাতে রেস্তোরাঁটিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। নৃশংসভাবে খুন করে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
সাত বছর পর গতকাল ১ জুলাই সকালে সেই রেস্তোরাঁ ভবনে গিয়ে দেখা মেলে সবুজ চত্বরের। ছিলেন বিদেশি কূটনীতিকরাও। তারা এসেছেন ফুল হাতে, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে। এদিন ফুল দিয়ে ওই হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন কূটনৈতিক, তাদের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাড়ির অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে ওই রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিহত হন ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালাউদ্দিন খান। তাদের স্মরণে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলশান থানার সামনে তৈরি করা হয়েছে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার ‘মনুমেন্ট’।
গতকাল সকালে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
গতকাল হলি আর্টিসান বেকারির ওই ভবনে গিয়ে জানা যায়, হামলার পর সেখানে রেস্তোরাঁটি আর চালু হয়নি। কয়েক বছর সিলগালা থাকলেও ক্ষতবিক্ষত দোতলা ভবনটি সংস্কার করে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মালিক।
২০১৬ সালের সেই রাতে বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন নূর আলম। তবে ঘটনার সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, নিয়েছিলেন ছুটি। গতকাল তিনি জানান, ভবন মালিক হামলার বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেন না। তিনি বাসায় থাকলেও কেউ বের হননি। তবে সেই রাতের নিহতদের স্মরণ করতে অস্থায়ী বেদির জন্য তাকে গেট খুলে রাখতে বলেছেন। তবে সকাল ১০টায় তা বন্ধ করে দেন।
এদিকে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর ‘সুপ্ত বীজ’ এখনো আছে।
তিনি বলেন, সাত বছর আগে হলি আর্টিসানে বিদেশি নাগরিকদের অতর্কিতভাবে জঙ্গিরা জিম্মি করে তাদের হত্যা করে। এসময় তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের দুজন সিনিয়র পুলিশ সদস্য শহীদ হন। আজকেও আমাদের মনে তা দগদগে ঘায়ের মতো জ্বলে।
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমরা বলব, এটা নিয়ন্ত্রণে আছে। জেএমবি, নব্য জেএমবিসহ জঙ্গিবাদ নেই বললেই চলে। তবে জঙ্গিবাদের সুপ্ত বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে। নতুন কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তারা মাথাচাড়া দিতে পারেনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে ‘শারক্বীয়া’ (জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া) একটি। এই সংগঠনের ডাকে অনেক তরুণ হিজরত করেছিল, পাহাড়েও প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পুলিশ-র্যাব তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। আবার অনেকে ভুল বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করেছে।
হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সিটিটিসি তদন্ত করেছে এবং তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যদিও এ ঘটনার অনেক অভিযুক্ত বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। আর বাকিদের সাজা হয়ে গেছে। আমরা এখন অনেকটা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আশা করি, ভবিষ্যতে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারব।
মন্তব্য করুন