রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ইফতার বাজার বলে খ্যাত পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। বেলা যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে বেচাবিক্রি। শুরুর দিকে ক্রেতার চেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়ে ইউটিউবার ও ফুড ব্লগারদের। এতে বেশ বিরক্তও হয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
গতকাল বিকেলে চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রচলিত ইফতার সামগ্রীর পাশাপাশি নানা স্বাদ আর বাহারি নামের খাবারের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুর থেকেই সেখানে ভিড় করেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ভোজনবিলাসীরা। ঐতিহ্যবাহী আর খানদানি ইফতার কিনতে জটলা আর ভিড়ের সৃষ্টি হয় বাজারজুড়ে।
এবারও চকবাজারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ নামের একটি বিশেষ ইফতারি। এটি তৈরি করা হয় মাংস, সুতি কাবাব, কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদের খাবার এবং হরেক মসলা মিশেলে। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। কথিত আছে, প্রায় ৭৯ বছর আগে ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বাণিজ্যিকভাবে খাবারটি বিক্রি শুরু হয়। সেটি এখন পুরান ঢাকা ছাড়িয়ে রাজধানীজুড়ে আকর্ষণীয় ইফতারিতে পরিণত হয়েছে। রমজানে একবার হলেও এটি খাওয়ার নিয়ত রাখেন অনেকেই। সূত্রাপুর থেকে এসেছেন আবদুল্লাহ ইসলাম। পরিবারের প্রথম রোজার ইফতারে বাহারি আইটেম যোগ করতেই চকবাজারে আগমন। তিনি বলেন, ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর প্রথম রোজায় এখানে আসি। তবে শুধু প্রথম রোজায়। বড় বাপের পোলায় খায়, পেস্তা শরবত, দইবড়া, জিলাপিসহ বেশকিছু আইটেম কিনেছি। চকবাজারের ইফতারির স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সুযোগ থাকলে প্রতিদিন আসতাম।
কামাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, এই যে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ইফতারি কিনতে, এটাই এখানকার ঐতিহ্য। সবাই এখানের ইফতারি খেতে চান।
তবে প্রচলিত ইফতারের কদরও কিছু কম নয় চকবাজারে। বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, জিলাপি কালাই আইটেম
২৪০ টাকা, আটার জিলাপি ২০০ টাকা এবং বড় সাইজের জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিঙাড়া প্রতি পিস ৮ টাকা, সমুচা ৮ টাকা, চিকেন টোস্ট ৩০ টাকা, চিকেন পরোটা ৫০ টাকা, বিফ পরোটা ৬০ টাকা, বেগুনি ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, পেঁয়াজু ৫ টাকা, ভেজিটেবল পাকোড়া ৫ টাকা এবং ডিমচপ ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঘুগনি ৮০ টাকা কেজি, ছোলা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সবজির বড়া ১০ টাকা প্রতি পিস, গরুর টিকা ৩০ ও মুরগির টিকা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জালি কাবাব প্রতি পিস ৫০ টাকা, সাসলিক ৫০ টাকা, টিকা কাবাব ৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৭৫ থেকে ১০০ টাকা, চিকেন রোল ৬০ টাকা, আস্ত মুরগি ৩৫০ টাকা, পনির ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পানীয়র মধ্যে পেস্তা শরবত ২০০-২৫০ টাকা লিটার, মাঠা ৮০-১০০ টাকা লিটার ও বোরহানি ১০০-১২০ টাকা লিটার। ফালুদা বড় বাটি ২০০ টাকা, ফালুদা ছোট বাটি ১০০ টাকা ও দইবড়া বড় বক্স ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।