হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩২ এএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বিতীয় তেল শোধনাগার নির্মাণে গতি

ইস্টার্ন রিফাইনারি
দ্বিতীয় তেল শোধনাগার নির্মাণে গতি

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় তেল শোধনাগার নির্মাণে গতি এসেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অগ্রাধিকার খাতগুলোর কাজের গতি আনতে একশ দিনের পরিকল্পনা করে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হয়েছে। এজন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি চলতি মাসে বিষয়টি চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পটির ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি বিষয় রয়েছে। সেটিও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় তেল শোধনাগার নির্মাণের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর সাত বছরের মাথায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এই চুক্তি করার পর আরও ছয় বছর কেটে গেলেও প্রকল্পের কাজই শুরু করা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরুতে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হলেও পরে সরে আসে সরকার। পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ঋণ বা বিনিয়োগ কোনোটিই পাওয়া যায়নি। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করলেও ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে সরকার এখন বেসরকারি অংশীদারত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ এস আলম। পিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি সেক্টরে এটি হবে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এরই মধ্যে এস আলম গ্রুপ থেকে সমঝোতা স্মারক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে জ্বালানি বিভাগের গঠিত কমিটি। প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকে নতুন করে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার রিফাইনারি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে গ্রুপটি।

উল্লেখ্য, ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন জ্বালানি তেল শোধনাগার। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে এই রিফাইনারি। ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ এই প্লান্ট নির্মাণ করে। পরে জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার মধ্যে ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পটি হাতে নেয় বিপিসি। শুরুর দিকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও পরে সংশোধিত হয়ে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেওয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন সম্পন্ন করে। অন্যদিকে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি।

তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ছে। সর্বশেষ সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি খাত থেকে ১৬ হাজার ১৪২ কোটি ৯৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে সংস্থান হওয়ায় অবশিষ্ট ৬ হাজার ৯১৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বিপিসির নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দিতে হবে।

জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনায় ৩-৫ মিলিয়ন টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে ৮০:২০ ইক্যুইটি শেয়ার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারির নির্মাণাধীন ইআরএল-২ প্রকল্পটি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বিপিসিকে সিদ্ধান্তের কথা জানায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি সেক্টরে এটি হবে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬০ লাখ মেট্রিক টন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধামরাইয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, যুবকের মৃত্যুদণ্ড

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

শাহবাগ অবরোধ বুয়েট শিক্ষার্থীদের 

সাদাপাথর পরিদর্শনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটি

যেসব দেশে বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পেতে পারেন আপনিও

‘মামাতো ভাইকে দিয়ে যুবদল নেতাকে খুন করান স্ত্রী’

জার্মান যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত 

জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষের হামলায় বাবা-ছেলে খুন

নিউইয়র্কে কনস্যুলেটের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

১০

‘শেষবার মানিক আমাকে মা বলে ডেকেছিল’

১১

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ 

১২

অনলাইনে যেভাবে কাটবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজের টিকিট

১৩

পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট?

১৪

প্লট দুর্নীতি / শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য শুরু

১৫

ভাসমান বীজতলা তৈরিতে সফল খুলনার রোকেয়া

১৬

ব্রাজিল থেকে ১২০ টাকায় গরুর মাংস আমদানির খবর ভিত্তিহীন

১৭

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন : এনবিআর চেয়ারম্যান

১৮

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি যেদিন

১৯

শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৫ বিচারপতি

২০
X