পাঁচ বছর ধরে পানি সংকটে আছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হল কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে বারবার আশ্বস্ত করলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। এতে বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারের সময় চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে হলের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে।
জানা যায়, হলের ওয়াশরুমগুলোতে মাঝেমধ্যেই পানি থাকে না; কখনো আবার খাবার পানিও থাকে না। গোসলে গিয়ে পানির অভাবে আটকা পরতে হয়, অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক চেষ্টার পর অল্প পানির দেখা মিললেও হঠাৎ আবার নাই হয়ে যায়। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে হলটিতে পানি না থাকা যেন একটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে। আর রমজান মাসে সমস্যা আরও বাড়ে। এক-দুদিন পরপর সেহরি ও ইফতারের সময় পানি পাওয়া যায় না। তখন শিক্ষার্থীদের এক ব্লক থেকে অন্য ব্লক এমনকি অন্য হলে ছোটাছুটি করতে হয়। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে বারবার হল প্রভোস্টের কাছে গেলে আশ্বাস মিলেছে কিন্তু স্থায়ী সমাধান করেননি কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ হলে পানি সংকটের মতো মৌলিক সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদাসীন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কখনো পাম্পে সমস্যা, সংস্কার করা হচ্ছে, লাইনে কাজ করা হচ্ছে, পাইপ ফেটে গেছে এ ধরনের নানা অজুহাত দেখান।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, তিন বছর ধরে হলে আছি, পানি না থাকার সমস্যার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্তত রোজার আগে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। বহুতল ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে পানি থাকে না, আবার বৃষ্টির দিনে জানালার থাইগ্লাসের নিচ দিয়ে পানি ঢুকে রুম সয়লাব।
জানা যায়, ২০১৩ সালে এইচ আকৃতির ১০তলা হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথম দফায় দুইতলা ও পাঁচতলার কাজ শেষে হলটি চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সাল থেকে দশতলার দুটি ব্লকই শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু পানি সাপ্লাইয়ের লাইন ও রিজার্ভ ট্যাঙ্ক আগের মতোই থেকে যায়। ফলে শুরু থেকেই হলে পানির সমস্যা। চার-পাঁচদিনও হলটিতে পানি না থাকার ঘটনা ঘটেছে। তখন ওয়াসা দিয়ে অল্প পরিমাণে পানি সরবরাহ করা হতো।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওলীউল্লাহ বলেন, অনেক সময় পানি ছাড়তে এদিক-সেদিক হলে অল্প সমস্যা হয়; কিন্তু বড় কোনো সমস্যা নেই।
নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মাসুম বলেন, সমস্যা সমাধানে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে এই হল আর টিএসসির মধ্যে নতুন রিজার্ভ ও পাম্প বসালে আর সমস্যাটা থাকবে না। কবে কাজটি হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।