বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে লেখা হলো অভূতপূর্ব ও রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়, যার লেখক বাবর আলী। ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে রোববার পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি। এবার জয় করলেন বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ শৃঙ্গ লোৎসে। এভারেস্ট জয়ের দুদিনের মাথায় মঙ্গলবার লোৎসের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়ান বাবর। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক অভিযানে হিমালয়ের দুই শৃঙ্গ জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়লেন চট্টগ্রামের এই পর্বতারোহী। পর্বতারোহণের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ডাবল হেডার’। সফল অভিযান শেষে দেশে ফেরার অপেক্ষা চিকিৎসক বাবরের।
বাবর আলীর অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান বলেন, মঙ্গলবার নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিট) বাবর লোৎসের চূড়ায় পৌঁছান। তিনি জানান, এভারেস্ট থেকে নেমে এসে রোববার রাতে ক্যাম্প-৪-এ বিশ্রাম নেন বাবর আলী। তারপর সোমবার রাতে লোৎসে অভিযান শুরু করেন।
ফরহান জামান বলেন, বাবর গত ১৯ মে ভোরে সামিট করেছেন মাউন্ট এভারেস্ট। বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। কারণ, কোনো বাংলাদেশির এক অভিযানে দুটি ৮ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত সামিটের সাফল্য এটিই প্রথম।
বাবর আলীর নিজের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার সকালে দেওয়া পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আজ তিন দিন ধরে রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার হলো অবসান। আমরাও পারি! আমাদের দিয়েও সম্ভব! এটিই এই বাংলাদেশের কোনো সন্তানের প্রথম লোৎসে সামিট এবং প্রথম একই অভিযানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গ সামিট। এই জাতি অন্তত একটা দিন আনন্দে মাতুক। তবে ভুললে চলবে না, বাবর এখন নেমে আসা শুরু করেছেন। বেজক্যাম্পে পৌঁছালেই হবে মূল উৎসব।’
বাবরের আগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। তারা হলেন মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত (দুবার), নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন ও মো. খালেদ হোসাইন।
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাবর আলী জোড়া এই আট হাজারি পর্বত (এভারেস্ট এবং লোৎসে) শীর্ষ স্পর্শ করে বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
বাড়িতে আনন্দ-উৎসব: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর নজুমিয়াহাটে বাবরের বাড়িতে চলছে আনন্দ-উৎসব। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজিমন দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুরা ছুটে আসছেন মিষ্টি হাতে। ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা লিয়াকত আলী ও মা লুৎফুর নাহারের মুখে হাসি। তবে ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তাও রয়েছে।
লুৎফুর নাহার বলেন, ‘প্রথমে দুশ্চিন্তা ছিল এভারেস্টের চূড়ায় ঠিকমতো উঠতে পারবে কি না, তা কেটে গেছে। এখন একই চিন্তা লোৎসে পর্বত শৃঙ্গে ওঠানামা নিয়ে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, বাবর যেন সুস্থভাবে ফিরে আসে।’