কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০২:২৪ এএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ১০:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দুই বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ সময় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নিলেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যায়নি। বরং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর চলতি মাসে তা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা খাতের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও এখন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাব ফেলছে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করা হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে আইএমএফের পরামর্শে। আইএমএফের পরামর্শেই জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এজন্য সামনে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বাজারে আগুন লাগবে। কিন্তু জ্বালানি তেল বিক্রয়কারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছ হিসাব নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। জীবনযাত্রা ব্যয় বাড়বে। বাজারে আগুন লাগবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র একটি দেশে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিপিসি জ্বালানি তেলের দাম বাড়াচ্ছে; কিন্তু সরকারি এ সংস্থাটির কোনো স্বচ্ছতা নেই। দাম বাড়ানোর মাধ্যমে বিপিসির নেতৃত্বে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করা কতটা যৌক্তিক, কতটা ন্যায্য, সে বিবেচনা করা হয়নি। ফলে দিন দিন সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটের আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বাজারে এর একদফা প্রভাব পড়েছে। বাজেটের পর ফের বাজারে আরও একবার প্রভাব পড়বে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে বাড়ানো হলো। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে জুন মাসে দাম বাড়ানো হয়েছে। তেলের দাম বাড়ায় এরই মধ্যে কাঁচাবাজারে প্রভাব পড়েছে। বাজারে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।

তারা বলছেন, প্রকারভেদে এক লিটার জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। এর প্রভাব সরাসরি বাজারের ওপর পড়বে। অথচ নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও লাভ করছে বিপিসি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালে তেলের দাম বাড়িয়ে মুনাফা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

দেশে গত দুই বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়েছে দফায় দফায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন ঘোষণায় ডিজেল ও কেরোসিনের লিটারে বেড়েছে ৭৫ পয়সা। এ অনুযায়ী ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম এখন প্রতি লিটার ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা। আর আড়াই টাকা বাড়িয়ে পেট্রোল ও অকটেনের লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ১২৭ ও ১৩১ টাকা। এ ছাড়া গ্যাসের দামও গ্রাহক পর্যায়ে গত দুই বছরে বাড়ানো হয়েছে দুবার। আর শিল্প খাতে ক্যাপটিভে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম চলতি বছরেই দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। আবার বিদ্যুতের দাম গত বছর বেড়েছে তিন দফায়। এরপর গত মার্চে তা আরও এক দফায় বাড়ানো হয়।

এ অবস্থায় সামনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দেশে মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও জোরালো করে তুলবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাদের ভাষ্যমতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়লে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূতসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবার উৎপাদন খরচ বেড়ে দামও বাড়ে। বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুভাবেই মূল্যস্ফীতিকে চাপে ফেলছে।

জানা গেছে, ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ২৩ দিনের মাথায় সব জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি তেলে স্বয়ংক্রিয় মূল্য বৃদ্ধির পদ্ধতি ঘোষণা করে সরকার। এরপর গত মার্চ ও এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। এদিন রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনে ৭৫ পয়সা, পেট্রোল ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১০৭ টাকা থেকে ৭৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা, পেট্রোলের দাম ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১২৭ টাকা এবং অকটেনের দাম ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা এ দাম ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে।

মূল্য সমন্বয়ের পরও ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটার প্রতি ৯০.৭৬ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৫ টাকা ৭০ পয়সা) এবং পেট্রোল ১০৩.৯৪ রুপিতে (বাংলাদেশি ১৪৩.৯৬ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এ দাম বাংলাদেশ থেকে লিটারপ্রতি যথাক্রমে প্রায় ১৭.৯৫ ও ১৬.৯৬ টাকা বেশি। এর ফলে সীমান্ত দিয়ে জ্বালানি তেল পাচারের কোনো শঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির খুনিদের দ্রুত শাস্তির দাবি এটিএম আজহারের

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান চসিক মেয়রের

জব্দ সার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির অভিযোগ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এনইআইআর নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করবে : আমীর খসরু

আবারও দেশসেরা ক্রেডিট রেটিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক

সোমবার টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

রংপুরে সস্ত্রীক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ মাদকের সাথে কোনো আপোষ নেই : মির্জা আব্বাস

খাদ্য দূষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ

সিডনিতে বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি সামিট / তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

১০

গ্যাবায় স্মিথ ও জোফরা আর্চারের মধ্যে কী হয়েছিল?

১১

বিদেশি সিগারেট পাচারকালে ইউপি সদস্য আটক

১২

‘মানুষ তাদের ১৯৭১ সালেই দেখেছে’

১৩

রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল দখল করে সরকার উৎখাতের ঘোষণা

১৪

পাবনা মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেটদের পাসিং আউট প্যারেড সম্পন্ন

১৫

চিরকুটসহ রেখে যাওয়া সেই নবজাতক পেল বাবা-মা

১৬

নির্বাচন-গণভোটের প্রস্তুতি নিয়ে যমুনায় বৈঠক

১৭

বছর শেষে জোড়া ধামাকা নিয়ে পর্দায় ফিরছেন তানজিকা

১৮

শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ

১৯

নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের হানা, অতঃপর...

২০
X