বন উজাড়, পানি দূষণসহ নানা কারণে পরিবেশগত সমস্যায় পড়ছে দেশ। দৃশ্যমানভাবে পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় পরিবেশের তিনটি আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অনেক কম। অন্য আইনের ১৩ হাজার মামলার বিপরীতে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মাত্র ২৬০ মামলা বিচারাধীন, যা বিচারাধীন মোট মামলার মাত্র ২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতে একেবারেই কম মামলা দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকে। যে কারণে আদালতে মামলার সংখ্যা কম। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করে দূষণ ও দখলকারীদের কঠোর সাজা নিশ্চিতে আগ্রহী নয়। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যে জরিমানা করে, তার বড় অংশ আবার আপিল করে ছাড় পায় দূষণকারীরা। সব মিলিয়ে দূষণ-দখল পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। এসব কারণে আইন থাকলেও মামলার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।
ঢাকার পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম শুরু ২০০৩ সালে। বর্তমানে ১১৩ মামলা বিচারাধীন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আইনের ১০০ মামলা মুলতবি রয়েছে। তবে এ আদালতে অন্য আইনের ৯ হাজার ৫৭৪ মামলা বিচারাধীন।
দেখা গেছে, পরিবেশ আদালতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এ পর্যন্ত ৫৭৬ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৩টির নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৪ সালে ৭২, ২০০৫ সালে ২৩, ২০০৬ সালে ৩৭, ২০০৭ সালে চারটি, ২০০৮ সালে ৯৭, ২০০৯ সালে ৮২, ২০১০ সালে ৬০, ২০১১ সালে ৩৩, ২০১২ সালে ২৪, ২০১৩ সালে ৯, ২০১৪ সালে ৯, ২০১৫ সালে ১১, ২০১৬ সালে ৪, ২০১৭ সালে ৬, ২০১৮ সালে ১৯, ২০১৯ সালে ৩, ২০২০ সালে ২৯, ২০২১ সালে ১৯, ২০২২ সালে ১৯, ২০২৩ সালে ১১ এবং ২০২৪ সালে একটি মামলা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ১০টি মামলা বিচারাধীন। পাশাপাশি অন্য আইনে ১ হাজার ৬২০ মামলার বিচার চলছে। ২০০৪ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত পরিবেশ আপিল আদালতে ৯২ মামলার আপিল হয়। তবে ২০১৪ ও ২০২১ সালে কোনো আপিল হয়নি। ২০০৪ সালে একটি, ২০০৫ সালে তিনটি ২০০৬ সালে দুটি, ২০০৭ সালে আটটি, ২০০৮ সালে পাঁচটি ২০০৯ সালে ১১টি, ২০১০ সালে ১১টি, ২০১১ সালে একটি, ২০১২ সালে দুটি, ২০১৩ সালে পাঁচটি, ২০১৫ সালে একটি, ২০১৬ সালে চারটি, ২০১৭ সালে চারটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি, ২০১৯ সালে একটি, ২০২০ সালে সাতটি, ২০২২ সালে আটটি, ২০২৩ সালে আটটি এবং চলতি বছরে পাঁচটি মামলায় আপিল হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালতে ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে গত ছয় মাসে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ২০২৩ সালে ১০২ এবং ২০২৪ সালে ৩৫টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে ১৩৭ মামলা বিচারাধীন। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের বাইরে দেড় হাজার মামলার বিচার চলছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এস এইচ এম হুমায়ুন রশিদ তালুকদার বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর অনেক সময় জরিমানা করে ছেড়ে দেয় যে কারণে মামলা কম হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনটি আরও কঠোর করা উচিত। কারণ অনায়াসে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। জামিন পাওয়ার কারণে এ আইনের অপরাধ বাড়ছে। আইনটি কড়াকড়ি করলে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ভালো হবে।
ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এ এফ এম রেজাউল করিম হিরণ বলেন, আমাদের আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ায় মামলার সংখ্যা কম। মামলা কম নিষ্পত্তি হলে আপিলেও কম আসে। অনেক মামলায় আসামি খালাস পায় তাই আপিলও হয় না।