বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যুর চার বছর পূর্তি আজ শনিবার। ২০২০ সালের ২৯ জুন ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি। এ ঘটনায় করা মামলায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। তারা অভিযুক্ত হলেও বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি এখনো। এমনকি চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়নি। মাত্র ৩৬ জনের সাক্ষ্য নিয়েই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে সাক্ষ্য গ্রহণ। এক্ষেত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আসামিপক্ষের দাবি, সাক্ষ্য গ্রহণে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসেনি। তারা সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমদ্দার বলেন, মামলটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ৩৬ সাক্ষীর জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এখন আসামিরা সাফাই সাক্ষী দেবে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেরা করা হবে। আশা করছি, বিচার শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। আগামী ৪ জুলাই এ মামলায় আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষীর দিন ধার্য করা হয়েছে। সাফাই সাক্ষী শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে। এরপর আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন।
২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার ৩০ জুন রাতেই নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তদন্ত করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, সুকানি নাসির হোসেন মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, লঞ্চ মালিক কিছু কমোড ও মালপত্র নামানোর জন্য ময়ূর কোম্পানির ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মালিক এবং অন্য কর্মকর্তারা মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভার ও গ্রিজারদের নির্দেশ দেয়, যে কারণে ঘাতক লঞ্চের কর্মচারীরা তাড়াহুড়া করে দ্রুত মালপত্র সরবরাহের জন্য বোগদাদিয়া ডকইয়ার্ড ছেড়ে টার্মিনালের দিকে রওয়ানা হয়। এ ছাড়া মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে লঞ্চ চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাদের লঞ্চ পরিচালনার কথা, তারা লঞ্চে ছিলেন না। আসামি আবুল বাশার, জাকির, নাসির, শিপন, শাকিল, হৃদয়ের নির্দেশনা ভুল থাকায় লঞ্চের গতি ছিল অনেক বেশি। যেখানে ধীর হওয়ার কথা, সেখানে ফ্রন্ট গিয়ারে রেখে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে গতি আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, লঞ্চ মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালামরা ময়ূর কোম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাদের ভুল দিকনির্দেশনায় এবং পরিচালনায় ৩৪ নিরীহ মানুষের জীবন চলে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চের মাস্টার-সুকানিরা বারবার সংকেত দেওয়ার পরও এজহারনামীয় আসামিরা দ্রুত ঘাটে যেতে মর্নিং বার্ডকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে, যে কারণে ধাক্কা লেগে মুহূর্তেই লঞ্চটি তলিয়ে যায়।
ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, এ মামলায় ৩৬ জন সাক্ষীর কেউ বলতে পারেননি, কোন লঞ্চ কাকে ধাক্কা দিয়েছে। তারা শুধু ডুবতে দেখেছে। সব আসামি সাফাই সাক্ষী দেবে। তাই প্রত্যাশা করছি, তারা খালাস পাবেন।