

ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া ও রায়েরবাগ এলাকায় টানা কয়েকদিন যে ভয়ংকর সহিংসতা হয়েছে, তার একটা অংশের মাস্টারমাইন্ড ছিল ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা। পুলিশ বলছে, ওই এলাকায় পুলিশের সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে ব্রিজের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার নেতৃত্বেও ছিল এই মাসুদ। ওই এলাকার নাশকতায় অর্থের জোগানদাতাদের একজন কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক। মূলত তার নির্দেশেই ওই এলাকায় নাশকতা চালানো হয় বলে দাবি পুলিশের।
সহিংসতার মধ্যে যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ ও শনির আখড়া এলাকায় দুই পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলো দনিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইরফান, ছাত্রদলের কর্মী তারেক, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া এবং জামায়ত কর্মী আবু বক্কর ইব্রাহীম। তবে যুবদলের তারেক পলাতক।
গতকাল শুক্রবার ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে চালানো নাশকতায় দুষ্কৃতকারীদের প্রধান টার্গেট ছিল পুলিশ। নাশকতাকারীদের পরিকল্পনা ছিল, পুলিশকে দুর্বল করতে পারলেই রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে ফেলা যাবে। পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত ও বিএনপির ক্যাডাররা যাত্রাবাড়ী এলাকায় নির্মমভাবে পিটিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। শুধু রাস্তায়ই হত্যা করেনি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে পুলিশ সদস্যদের খুঁজেছে তারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে পারলে হয়তো আন্দোলন সফল হবে। পুলিশ দুর্বল হলে পিছিয়ে যাবে এবং তখন তারা এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং সরকারের পতন ঘটাতে পারবে বলে মনে করেছিল। কিন্তু পুলিশের মনোবল মোটেও ভাঙেনি। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তারা যেখানেই থাকুক ছাড় দেওয়া হবে না।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া, তারেকসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে অবস্থান করে। এ ছাড়া মাসুদ রানার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় ইরফান ও বক্কর আরও কয়েকটি দল নিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। মাসুদ রানার নেতৃত্বে তারা রায়েরবাগ-শনির আখড়া এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদের মাইকে গুজব ছড়ানো, থানা আক্রমণ এবং পুলিশ হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার মাসুদ রানা, ইরফান ও আবু বক্কর ইব্রাহীম পুলিশ হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া তারা ওই এলাকায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডবের কথা স্বীকার করেছেন। আবু বক্কর ইব্রাহীম দাবি করেছেন, তিনি ইরফানের নির্দেশে এসব কাজ করেছেন।
ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাসুদ রানা মোবাইল ফোনে কর্মীদের নাশকতার নির্দেশনা দিয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তারের পর মোবাইল ফোন ঘেঁটে এর প্রমাণ মিলেছে। এই মাসুদ রানা পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখার মূলহোতা। সে কর্মীদের পদপদবি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের ‘সক্ষমতা যাচাই ও পরীক্ষা’ নিতে নাশকতায় নামায়। তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় কাউকে একা পেলেই পুলিশ কি না, তা যাচাই করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মাসুদ রানাকে সব নির্দেশনা দিয়েছিল যুবদল নেতা তারেক। তাদের নেপথ্যে আরও কেউ ছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।
ডিবির অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, তারেক ও মাসুদ রানার হয়ে ১৯ জুলাইসহ গত কয়েকদিন যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ ও শনির আখড়া এলাকায় গ্রেপ্তার ওই ছয়জন ছাড়াও এখন পর্যন্ত শুভ ও তার ছোট ভাই, ইভান, ফয়সাল, রূপক, মাসুদ, জাকের, ভান্ডারি, মাকসুদ ও লিটনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ওই এলাকার নানা পয়েন্টে নাশকতার নেতৃত্বে ছিল।