কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৯ এএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শর্ষেই ভূত বদরুন্নেসায়!

গ্রুপিং রাজনীতির শিকার ৪ ছাত্রলীগ কর্মী
ছাত্রলীগ কর্মীদের এভাবেই কানে ধরান আন্দোলনকারীরা
ছাত্রলীগ কর্মীদের এভাবেই কানে ধরান আন্দোলনকারীরা

রাজধানীর সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রলীগ নেত্রীদের ওপর হামলার ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে খোদ শাখা ছাত্রলীগের অন্য দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে। হামলায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সক্রিয় ছাত্রলীগের কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর করলেও অক্ষত রয়েছে ওই দুই নেত্রীর কক্ষ। এ ছাড়া হামলার কয়েকদিন আগেই ক্যাম্পাস ছাড়েন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা আক্তার শেলী। একদিকে শেলীর চার কর্মীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করছেন আন্দোলনকারীরা, অন্যদিকে ভাইরাল হয় তার বিয়ের ছবি।

দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের মতো গুরুতর অভিযোগ বহুদিনের। একাধিকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন জায়গায় বিচার দিয়েও প্রতিকার মেলেনি। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও একটা ক্ষোভ ছিল। তবে একটি মহিলা কলেজের ছাত্রীদের এভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের পেছনে ক্ষোভের চেয়ে বেশি ছিল গ্রুপিং রাজনীতি।

জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ মে এক বছরের জন্য বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এক বছরের কমিটিতে দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি শীর্ষ দুই নেত্রী। ফলে সাধারণ ছাত্রলীগের কর্মীরাও শীর্ষ দুই নেত্রীর ওপর ছিলেন মনঃক্ষুণ্ন। পাঁচ সদস্যের কমিটির একজন রাজনীতিতেই নেই। বাকি দুই সাংগঠনিক সম্পাদক রিমা আফরিন ও খাদিজা আক্তার নিজেদের ক্যাম্পাসে স্বঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করতেন। কলেজ ছাত্রলীগের মাত্র চারজন নেত্রীর মধ্যেও কোনো সমন্বয় ছিল না। আবার কমিটি ভেঙে যাওয়ার ভয়ে শীর্ষ দুই নেত্রী অন্য কর্মীদের সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে দিতেন না। ফলে কলেজটিতে ছাত্রলীগ করত হাতে গোনা কয়েকজন, যে কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যখন বদরুন্নেসায় হামলা করে, তখন কোনো প্রতিরোধই করতে পারেনি ছাত্রলীগ। সভাপতি সেলিনা আগে থেকেই ছিলেন হল ছাড়া আর সাধারণ সম্পাদক সাইমুন নিজের কর্মী নিয়ে রাতেই হল ছাড়েন। কলেজে আটকা পড়েন সভাপতি শেলী গ্রুপের চার কর্মী। মারধর করে এই চারজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। দুজনকে মারধরের পর পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

নারী শিক্ষার্থীদের এভাবে মারধর এবং ভিডিও করার বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ছাত্রলীগের পরিচয়ের আগে তারা শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের এভাবে কান ধরে ওঠবস করিয়ে এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া কোনো সভ্য মানুষের কাজ নয়। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য ওই শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হবেন। অবশ্য শিক্ষার্থীরা আঙুল তুলছেন কলেজ প্রশাসনের দিকে। তারা বলছেন, একটি মহিলা কলেজের ভেতরে বহিরাগতরা ঢুকে হামলা চালাতে পারলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়? এর দায় কলেজ প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এ ছাড়া হলের দায়িত্বে থাকা হল সুপাররাও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, কমিটি ভেঙে গেলে নেতা হবেন, এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে দুই সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্ধন দিয়েছেন হামলায়। যে কারণে কর্মীদের রুমে ভাঙচুর করা হলেও পদধারী ওই নেত্রীদের কক্ষ ছিল অক্ষত। আবার সভাপতি শেলী ও সাধারণ সম্পাদক সাইমুনের মধ্যেও ভালো সম্পর্ক ছিল না। ফলে সাইমুন তার কর্মীদের নিয়ে কৌশলে হল ছাড়তে পারলেও আটকা পড়েন শেলীর গ্রুপের মেয়েরা।

২০২২ সালে কমিটি হওয়ার এক মাস না পেরোতেই সভাপতি শেলীর বিরুদ্ধে নতুন হলের (ফাতেমা হল) দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। আহত ওই দুইজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুনের বিরুদ্ধে হলের শিক্ষার্থীদের মারধরের একাধিক অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মারিয়া শাহরিন নামে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে তৃতীয় বর্ষের দুটি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি মারিয়া। এরপর মানসিক অত্যাচারের একপর্যায়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন তিনি। গত বছরের ২ মার্চ লাইজু আফরিন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। গত বছরের ৬ জুন নিশাত তাসনিম নামে আরেক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। ১ অক্টোবর মারধর করা হয় তাওহিদা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আঁখিনুর আক্তারের ওপর বারবার হামলা হওয়ায় তিনি রাজনীতি এবং কলেজ ছেড়ে চলে যান। গত বছরের ৪ অক্টোবর হুমায়রা মনি নামে এক শিক্ষার্থীকে দুই ঘণ্টা রুমে আটকে মারধর করা হয়। কলেজের দুই শীর্ষ নেত্রীর এমন বেপরোয়া আচরণের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের প্রতি ক্ষোভ ছিল, যার ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ওই চার ছাত্রলীগ কর্মীর ওপর।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুন কালবেলাকে বলেন, ‘হামলার আগে আমি আমার মেয়েদের নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ি। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বহিরাগতরা এসে হামলা করেছে। আর কোনো বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’

সভাপতি সেলিনা আক্তার (শেলী) বলেন, ‘আমি বাড়ি গিয়েছিলাম। তবে শনিবার (১৩ জুলাই) আমি ঢাকায় আসি। আমি ঢাকায় ছিলাম। নিয়মিত প্রোগ্রাম করছি।’ বিয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পারসোনাল বিষয় নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

সাবির্ক বিষয়ে জানতে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবারও বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তানি ব্যান্ড ‘কাবিশ’

স্বাস্থ্য, ত্বক ও ঘরের যত্নে ছোট্ট জাদু ‘আদা’

একটি রাজনৈতিক দল জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে : ব্যারিস্টার খোকন

আজ ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করুন ব্র্যাক ব্যাংকে

তছনছ করে দুর্বল হলো ঘূর্ণিঝড় মেলিসা

সিরিয়ার ওপর সিজার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ দিচ্ছে ব্র্যাক

ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবে পেন্টাগন

অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্স

১০

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১১

দেশের ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল হবে : মান্নান

১২

ঢাকায় কখন হতে পারে বৃষ্টি, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৩

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৪

০১ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

কুবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন / অনাবাসিকদের প্রার্থিতা ও ভোটাধিকার নিয়ে বিতর্ক

১৬

বগুড়ায় ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত বিএনপির যেসব প্রার্থী

১৭

কোটি টাকার পণ্য আত্মসাতের চেষ্টা, মালিকের ভাইসহ গ্রেপ্তার ৩

১৮

একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে : সেলিমুজ্জামান

১৯

‘ঢাকায় দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব’

২০
X