মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ এএম
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চলমান পরিস্থিতিতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি

অর্থনীতি
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

দুই বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ দেশের সাধারণ মানুষ। সরকারের নানা পদক্ষেপেও মূল্যস্ফীতি কমেনি। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সারা দেশে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় ও কারফিউ জারি করে। ফলে সারা দেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, ভেঙে পড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা। দেশের শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতের উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে শুরু করে। এই পরিস্থিতি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতি কাজ করবে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে বছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা বাড়ল; এতে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, সরবরাহ চেইন মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে নতুন মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এবারের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়নি। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নীতি সুদহার আরও কিছুটা বাড়ানো উচিত ছিল। সাবধানতার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে হলেও অনন্ত এটি করা উচিত ছিল। সেটি তারা করেনি। ফলে এই মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি কার্যকর হবে না। আর হলেও সেটি অনেক ধীরে হবে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত আরও দু-তিন ধাপে নীতি সুদহার বাড়ানো উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শ না মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করে নীতি গ্রহণ করছে, যা এই মুহূর্তে ঠিক হচ্ছে না। এর ফলেও অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। আর বর্তমান গন্ডগোল (কোটা সংস্কার নিয়ে সহিংসতা) এটিকে আরও একটু পিছিয়ে দেবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক এবং দেশীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে। চলমান পরিস্থিতি মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বা প্রভাব ফেললেও এ ক্ষেত্রে মুদ্রানীতির কোনো ভূমিকা নেই বলেও মনে করছে সরকারের আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, গত ৮ মে আমরা সবশেষ নীতি সুদহার বাড়িয়েছি। সেইসঙ্গে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ডলারের দর নির্ধারণে ক্রলিং পেগ চালু করা হয়েছে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পলিসি নেওয়া হয়েছিল তখন। এসব নীতি প্রয়োগের সময়সীমা এখনো তিন মাস হয়নি। প্রথমত, এই নীতিগুলোর প্রভাব কী পড়ছে সেটি জানার জন্য আরও একটু সময় দরকার। দ্বিতীয়ত, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে আর তৃতীয়ত, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানত ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মূলত এসব কারণেই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অর্থাৎ সরকারের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আপাতত নীতি সুদহার বাড়ানো হয়নি।

তিনি বলেন, সাধারণত তিন মাস পরপর মুদ্রানীতির বৈঠক হয়। সেই হিসাবে আগামী অক্টোবরে মুদ্রানীতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রয়োজন হলে তখন আবার মুদ্রানীতি পুনর্মূল্যায়ন করা হতে পারে। এ ছাড়া, সরকার চাইলে পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোনো সময়ই মুদ্রানীতি পরিবর্তন হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও নীতি সুদহার বাড়িয়েও সেটি নিয়ন্ত্রণ হবে না। বরং নীতি সুদহার বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে।

একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, দু-তিন দিন সরবরাহ চেইন বন্ধ থাকলেও সেটি দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তিন দিনের ঘটনা পুরো মাসের হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তারপরও যদি বাড়ে সে ক্ষেত্রে মুদ্রানীতিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুদ্রানীতি তো সবসময়ই পরিবর্তনশীল একটি প্রক্রিয়া। অর্থনীতির গতিধারা পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তারপরও আমরা মনে করছি যেহেতু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে, ফলে ঘোষিত মুদ্রানীতি বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবশ্য অর্থবছর শুরুর মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে তা কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ হয়েছে। এটি জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গ্রাম ও শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরেই ছিল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে পশুবাহিত এক অজানা রোগ

ভারতীয় নাগরিক মোস্তফার এনআইডি বাতিল কেন নয়, হাইকোর্টের রুল

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনায় বৈঠকে বসেছে কমিটি

মাইকেল ক্লার্ক থেকে যুবরাজ সিং: ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়েছেন যে ৮ ক্রিকেটার

ফিট থাকতে সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন? সঠিক নিয়ম না মানলে বড় বিপদ

গাজাঘেঁষা ইসরায়েলি শহরে ড্রোন হামলা

হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা

বিধ্বস্ত সেই যুদ্ধবিমানের পাইলট ফোনে কথা বলেন ১ ঘণ্টা, তদন্তে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য

মানুষের কাছে আমি মীর জাফর হয়ে গেছি : রাহী

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আজীবন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন

১০

কর্ণফুলী টানেলে দুর্নীতি, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১১

পাকিস্তানের বন্যায় কেন এত প্রাণহানি ঘটছে?

১২

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব মো. আব্দুর রহমান

১৩

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খুবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৪

তামিল অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

১৫

তরুণদের মাঝে মহানবীর (সা.) সুন্নাহ জাগাতে বাহরাইন সরকারের বিশেষ উদ্যোগ

১৬

পুকুরে আছড়ে পড়ল হেলিকপ্টার

১৭

পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে : অধ্যাপক মজিবুর রহমান

১৮

ট্রাম্প প্রশাসনের ‘উগ্র দক্ষিণপন্থি’ নতুন যুক্তরাষ্ট্র

১৯

এক ছাতার নিচে ৩ পরাশক্তি, কোন দিকে যাচ্ছে বিশ্ব?

২০
X