ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকাণ্ডের এক দশকপূর্তি আজ। সাড়ে চার বছর আগে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনার মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত বছরের মার্চে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠানো হয়েছে। সেখানে গত এক বছরে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও কেউ সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। এতে এ মামলার সাক্ষীরা যেন ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে গেছেন। সাক্ষী না আসায় আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম আটকে রয়েছে।
মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২১ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ বদলির আদেশ দেয় আইন মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আদালতে কোনো সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় এ জন্য আগামী ১০ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়।
মামলার ১৮ আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। এর মধ্যে সাখাওয়াত, ফাহিমা, শরীফ উদ্দিন ও সৈয়দ মুজতবা আলী পলাতক রয়েছেন। অন্যরা জামিনে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিপণিবিতানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্র দেখে মিল্কীর একসময়ের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ভাড়াটে খুনিরা তাকে হত্যা করে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই ঘটনায় মিল্কীর ছোট ভাই রাশেদুল হক খান গুলশান থানায় এজাহারনামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১-এর সহকারী পরিচালক কাজেমুর রশিদ আদালতে ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে মূল আসামিদের নাম চার্জশিটে উল্লেখ না করার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৯ জুন বাদী রাশেদ হক খান মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করেন। আদালত ২০১৪ সালের ১৭ জুন আবেদন মঞ্জুর করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (সিআইডি) উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আগের চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামির সঙ্গে আরও সাতজনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। সেইসঙ্গে ৯ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৭৫ জনকে। ২০১৬ সালের ১৪ মে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার চার্জশিট আমলে নেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু কালবেলাকে বলেন, এটি আলোচিত মামলা। এ মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজিরের চেষ্টা করছি। আশা করছি, মামলাটির বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারব।
আসামি জাহাঙ্গীরের আইনজীবী নূর ইসলাম খান বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থায় সব মামলার নিষ্পত্তি করতে সময় লাগছে। এ মামলায় জাহাঙ্গীর আসামি সাখাওয়াতের ড্রাইভার ছিল। তিনি কোনোভাবেই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। বিচারক বিষয়টি আমলে নিলে তিনি খালাস পাবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বাদী রাশেদুল হক খানের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন