‘আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমার ছেলের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এই সন্তানই শেষ ভরসা। আমার সন্তানকে যদি সরকার কোনো ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমি বাঁচব। এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। একমাত্র সন্তান নিয়েই আমি বেঁচে আছি। সরকার যেন আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো আমার সামর্থ্য নেই।’
ছেলের চোখের দৃষ্টি ফিরে পেতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে এক চোখ হারানো জুবায়ের হোসেন জিহাদের মা হাসি বেগম।
গত ১৬ জুলাই বিকেলে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে বাঁ চোখ হারান জুবায়ের হাসান জিহাদ। জুবায়ের জেলার কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে এবং উপজেলার সরকারি হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
আহত জুবায়ের বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল নিয়ে সিরাজগঞ্জে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বের হয়ে রেলগেটের কাছে এলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। একপর্যায় একটি ছররা গুলি এসে আমার বাঁ চোখে লাগে। আমার বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা ভালো না দেখে চিকিৎসকরা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। সেই অপারেশনের পর থেকে বাঁ চোখে দেখতে পাই না। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা আমাকে বলেছেন এখনো তিনটি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু চোখে দেখতে পাব কি না বলতে পারছেন না। আমি চাই, আমার চোখের দৃষ্টি ফিরে আসুক। এখন পর্যন্ত আমার এটাই চাওয়া, আর কিছু চাওয়ার নেই।’
জুবায়ের হাসানের মা হাসি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের যখন পাঁচ মাস তখন তার বাবা মারা যান। আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেকে নিয়েই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আশা ছিল, ভালো রেজাল্ট করলে ঢাকায় ভর্তি করাব। পড়াশোনা করে একটা চাকরি করলে আমার দুঃখ কেটে যাবে। ছেলে আন্দোলনে গিয়ে চোখ হারাল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের চোখের চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই। আরও দু-তিনটি অপারেশন করাতে হবে। চোখের লেন্স লাগাতে হবে। সেক্ষেত্রে ২-৩ লাখ টাকা খরচ হবে। সরকার যদি আমার ছেলের পাশে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো সে চোখের দৃষ্টি ফিরে পাবে। ছেলের এ অবস্থায় সরকারি চাকরি পাবে কি না সন্দেহ। এই সরকার ও শিক্ষার্থীরা যদি কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমার দুঃখ ঘুচবে। না হয় সারাজীবন চোখ হারানো ছেলেকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হবে।’
মামুন বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জুবায়েরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সামর্থ্য অনুযায়ী জুবায়েরের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য করছেন। মামুন বলেন, ‘সে (জুবায়ের) কোনো দিক দিয়ে সাপোর্ট পাচ্ছে না। কারণ তার বাড়ি একেবারেই গ্রামে। আমরা চাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ যারা বিত্তবান আছেন, তারা জুবায়েরের পাশে এসে দাঁড়ান। আমরা জুবায়েরের বিকাশ নম্বর +৮৮০১৩০০৯৪৮৯৭০ দিয়ে দিয়েছি।’
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ওর ট্রিটমেন্ট দরকার। তার পরও আপনাদের মাধ্যমে অনেকে এগিয়ে আসছেন। উপজেলা প্রশাসনও ওর পাশে থাকবে সব সময়।’