চলমান বন্যায় ৭৮ হাজার ৩৬২ জন প্রসূতি ও দুগ্ধদায়ী মা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। বন্যাকবলিত ১১টি জেলার ৭৩ উপজেলার ৫২৮ ইউনিয়নের এলাকায় এই মায়েদের অবস্থান। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯০ জন মানুষ। বাংলাদেশ নিডস অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই তথ্য জানিয়েছে। তাদের সুরক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপক এ কে এম তারিফুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ প্রসূতি মায়েদের শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তাদের গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে কি না, তাদের কোনো জটিলতা দেখা দিয়েছে কি না, এসব মা কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না—এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে।
গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে ৩০ লাখ ৪৯ হাজার নারী, ৭২ হাজার ৪৬৭ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, চার বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৪ জন, পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৪ জন, এ ছাড়া ষাটোর্ধ্ব বয়সী বা বৃদ্ধ রয়েছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৪০১ জন।
এবারের বন্যায় ৫৮ লাখ ২৩ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুজন নিখোঁজ রয়েছে। এসব এলাকার চার হাজার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৩৮ জনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আরও প্রায় ৫ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় যে পরিমাণ গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাছ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এ ছাড়া ১ লাখ ৬২ হাজার ৮২৩টি পানযোগ্য জলাধার-নলকূপ এবং ২ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৯টি শৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জেলাভিত্তিক প্রতিবেদনে বন্যাকবলিত মানুষের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেনীতে ’১০ লাখ, কুমিল্লায় ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৪ জন, নোয়াখালীতে ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ জন, চট্টগ্রামে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮০ জন, খাগড়াছড়িতে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৯২ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীতে ৮০ হাজার, লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ ২৩ হাজার, কক্সবাজারে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫০ জন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯৩ জন, হবিগঞ্জে ২০ হাজার ৮৪০ জন এবং সিলেটে ১০ হাজার ৪৯৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তবে ১১ জেলা বন্যাকবলিত হলেও মৃত্যু হয়েছে ৯ জেলায়। এর মধ্যে ফেনীতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের, কুমিল্লায় ১৪ জনের, নোয়াখালীতে ৯ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়ি-বান্দরবান-লক্ষ্মীপুরে ও মৌলভীবাজারে একজন করে এবং কক্সবাজারে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিতে এলাকায় আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৩ জন এবং নারীর সংখ্যা ৩০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৪ জন।
বাংলাদেশ নিডস অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ জানায়, বন্যাকবলিত ১১ জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা প্রয়োজন ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮২ জন মানুষের। স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৮ জনের। প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রয়োজন ৮ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ জনের। এ ছাড়া সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দরকার ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৪ জনের। সংস্থাটি আরও জানায়, বন্যাকবলিত হওয়ায় ৭ লাখ ১৮১ জনের শিক্ষাজীবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯০ জন।