আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ এএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পের কাঁচামাল লক করে রপ্তানিকারকদের হয়রানি!

ব্যবসা-বাণিজ্য
শিল্পের কাঁচামাল লক করে রপ্তানিকারকদের হয়রানি!

অর্ধশতাধিক রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা কাঁচামাল লক করে (পরীক্ষার জন্য আটক) দুই সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক হয়রানি করে আসছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে আটকের খবর জানতে পারছেন রপ্তানিকারকরা। এসব চালানের শুল্কায়ন করতে অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে। অতিরিক্ত সময় চালান আটকে থাকায় প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে বড় জরিমানা। এতে সঠিক সময়ে পণ্য উৎপাদন এবং শিপমেন্ট নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ। তবে শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার বন্ধের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত ১৮ নভেম্বর বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে একটি চালান নিয়ে আসে সাঙ্গু গ্রুপের ফারসিং নিট কম্পোজিট। প্রতিষ্ঠানটি ইনডেন্ট দেওয়ার সময় জানতে পারে, চালানটি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ আটকে রেখেছে। এর আগে ৪ নভেম্বর আরেকটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে নিয়ে আসা চালানও আটকে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। প্রায় দুই সপ্তাহ শুল্ক গোয়েন্দাদের দপ্তরে গিয়ে সর্বশেষ চালানটি খালাস করতে সক্ষম হয় শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি। তবে এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানিতে হুমকি তৈরি হয় বলে অভিযোগ করেছেন ফারসিং নিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন। তিনি একে হয়রানি হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রতিকার চেয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়। রপ্তানিকারকদের ঢাকায় শুল্ক গোয়েন্দার দপ্তরে ডাকা হচ্ছে এবং সেখানেও দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা সহজের পরিবর্তে কঠিন হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন নাসির উদ্দিন। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ এবং রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে চলতি সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান, বিডার চেয়ারম্যানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে লিড টাইম (কাঁচামাল আমদানি থেকে পণ্য উৎপাদন করে জাহাজে তোলা পর্যন্ত) অনেক বেশি। কাস্টমস যদি এভাবে কাঁচামালের চালান লক দিয়ে দিনের পর দিন বন্দরে রেখে দেয়, তাহলে কীভাবে ব্যবসা করব?’ তিনি বলেন, ‘চালান লক করার পর শুল্ক গোয়েন্দার চট্টগ্রাম অফিসে গিয়েছি। পরে ঢাকায় শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালকের দপ্তরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও দেখা করতে পারিনি। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে এনবিআরের কাছে এই হয়রানির প্রতিকার চেয়েছি।’ ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটের এই সময়ে শুল্ক কর্মকর্তাদের এমন আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন এই রপ্তানিকারক।

শুধু সাঙ্গুর ক্ষেত্রে নয়, অর্ধশতাধিক চালান আটকে রেখেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। অনন্ত জলিলের পণ্য চালানও আটকে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কাস্টমস সূত্র। এই কাজটি চট্টগ্রাম কাস্টমসে কার্যালয়ের হলেও ঢাকার মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেও একাধিক রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ মালিক অভিযোগ করেছেন।

কেন এই হয়রানি? রপ্তানিকারকরা বলছেন, স্পষ্টতই ঘুষের দাবিতে এমনটা করা হচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পান। কিন্তু এই কাঁচামাল তারা রপ্তানির জন্য পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার না করে খোলা বাজারে বিক্রি করেন। শুল্কমুক্ত সুবিধার এই অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য তারা কাঁচামাল আটকে রাখেন।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত-সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে অনেকে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে, তাদের চালান লক করা হয়েছে। আমরা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের চালান লক করেছি পরীক্ষা করার জন্য।’ হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা হয়রানির অভিযোগ করেছেন, তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। অনেক কারখানায় গিয়ে আমরা দেখেছি, জিন্সের প্যান্ট তৈরি করে যেসব প্রতিষ্ঠান, তারাও সিনথেটিক কাপড় আমদানি করেছে। অর্থাৎ খোলাবাজারে বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আমি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে থাকার সময় কেউ শুল্ক ফাঁকি দিতে পারবে না।’

তবে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন, কাঁচামালের চালান না আটকেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সে রকম আইনি পদ্ধতি রয়েছে। কী ধরনের পণ্যের চালান খালাস হচ্ছে, সেগুলো কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা কাঁচামাল দিয়ে সঠিক পরিমাণে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা যায়। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য খোলাবাজারে যাচ্ছে কি না, তাতে নজরদারি করতে পারেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তা ছাড়া অডিটের মাধ্যমে এই সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ করা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাপলা প্রতীক না পেলে নিবন্ধন নেবে না এনসিপি : সারোয়ার তুষার

আগের সংসার নিয়ে মুখ খুললেন তনির স্বামী

৪ ঘণ্টায়ও নেভানো যায়নি মিরপুরের গোডাউনের আগুন

পুকুরে গোসলে করতে নেমে একই পরিবারের ৩ শিশুর মৃত্যু

১৩ খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে সুখবর দিল মালয়েশিয়া

ইউআইইউ এবং পিএনজেড ইনোভেশনের মধ্যে গবেষণা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

৪৮ কেজি হরিণের মাংসসহ ১ শিকারি গ্রেপ্তার

অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে : রাশেদ প্রধান 

চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধীর দুই নেতা আটক

হংকং চায়নার বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুর একাদশে যারা আছেন

১০

‘আগামী নির্বাচনের ওপর দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে’

১১

মিরপুরে গার্মেন্টস-কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের ঘটনায় নিহত ৯

১২

বাংলাদেশে ব্লক হতে পারে ক্রিকইনফো!

১৩

জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না : রাশেদ প্রধান

১৪

পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ছাত্রদলের ২ নেতা নিহত 

১৫

ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উপদেষ্টাদের নাম ও কল রেকর্ড আছে : ডা. তাহের 

১৬

মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস নিয়ে জর্ডানের রাজার বিস্ফোরক মন্তব্য

১৭

২১ মাস অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন উত্তোলন

১৮

ভাত খাওয়ার সঠিক সময় জানালেন বিশেষজ্ঞ

১৯

কাতার চ্যারিটির বাংলাদেশ অফিসে চাকরির সুযোগ

২০
X