রাশেদ রাব্বি ও মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন ৭০ ভাগ অপ্রয়োজনে

প্রথম তিনটি শীর্ষ বিক্রীত ওষুধই গ্যাসের
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন ৭০ ভাগ অপ্রয়োজনে

দেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রির হার অস্বাভাবিক। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ওমিপ্রাজল, ইসমোপ্রাজল ও প্রেন্টাপ্রাজল জেনেরিক গ্রুপভুক্ত তিনটি ব্র্যান্ডের ওষুধ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার। দেশের মোট ওষুধের বাজারের বড় অংশই দখল করে আছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। গত অর্থবছরে দেশের বাজারে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭০ শতাংশ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করা হয় অপ্রয়োজনে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। অধিকমাত্রায় দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়তে পারে (মাল্টি অর্গান ফেইলিউর), এমনকি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্নায়ুতন্ত্র। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুড়িমুড়কির মতো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন না করতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, প্রচলিত ওষুধের মধ্যে দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০ ওষুধের মধ্যে পাঁচটিই গ্যাস্ট্রিকের। শুধু তা-ই নয়, ইসমোপ্রাজল গ্রুপের একটি ওষুধ (ব্র্যান্ড নেম সার্জেল) চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোও একই ধরনের। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরও দুটি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ (ম্যাক্সপ্রো ও প্যান্টোনিক্স)। তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইএমএস হেলথের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সার্জেল ব্র্যান্ডটি হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদিত। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মো. হালিমুজ্জামান বলেন, ওষুধের বাজারে গ্যাস্ট্রোলজিক পণ্যের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসক ও রোগীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় সার্জেল বছরের পর বছর ধরে বিক্রির শীর্ষে আছে। যদিও এখনো সার্জেলের বিক্রি ১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়নি। তার মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রির প্রবৃদ্ধি কম। এখনো এর বিক্রি বাড়তে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোও একই ধরনের। একই গ্যাস্ট্রোলজিক্যাল জেনেরিকের ম্যাক্সপ্রো ও প্যান্টোনিক্সের বিক্রি যথাক্রমে ৪৮৬ কোটি ও ৩৭৬ কোটি টাকা। শীর্ষ বিক্রীত ১০ ওষুধের মধ্যে পাঁচটিই গ্যাসের ওষুধ। গত ৯ মাসে সার্জেল বিক্রি হয়েছে ৯১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওষুধের বাজারে শুধু সার্জেল একাই ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাজার দখল করতে পেরেছে। ম্যাক্সপ্রোর মার্কেট শেয়ার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। প্যান্টোনিক্সের শেয়ার ১ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ৯ মাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ বিক্রীত ওষুধ প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ নাপা। যার বিক্রয় মূল্য ৩৩৮ কোটি টাকা। সেফ-থ্রি, মোনাস, এক্সিয়াম, সেক্লো ও বিজোরানের বার্ষিক বিক্রি ২০০ কোটি টাকার বেশি। দেশে বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হয় ৩১ জেনেরিক ওষুধ। তথ্য বলছে, ৭৯ জেনেরিক ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৫০ কোটি টাকার ওপরে।

রেনাটা পিএলসির কোম্পানি সেক্রেটারি জুবায়ের আলম বলেন, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী যত মানুষ আছেন, তাদের বেশিরভাগই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খান। কারণ আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়ার প্রবণতা কম। তার মতে, এ কারণে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন। তিনি জানান, রসুভাস্ট্যাটিন ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। এটি কোলেস্টেরল কমায়। কারণ অনেকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। উন্নত দেশেও এ ধরনের ওষুধের চাহিদা বেশি। দেশেও ভালো বিক্রি হতে পারে। তিনি বলেন, ম্যাক্সপ্রো দিয়ে আলসার, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ ও হাইপার অ্যাসিডিটি সম্পর্কিত সমস্যায় থাকা বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। সব ম্যাক্সপ্রো ফর্মুলেশন ইউএসএফডিএ, ইউকেএমএইচআরএ ও আনভিসা অনুমোদিত কারখানায় তৈরি হয়, যাতে রোগীরা দেশের সেরা ইসোমাপ্রাজল পান।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ‘ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ’ অর্থাৎ যা কিনতে বা বিক্রি করতে নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে এটি অবাধে বিক্রি হয়। তা ছাড়া দেশের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো মানুষের পেটে ব্যথা, বুকে ব্যথা, গলা-বুক জ্বালাপোড়া করা, বমিভাব এসব উপসর্গ অনুভব করলেই ওষুধের দোকানে গিয়ে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনে সেবন করেন। এমনকি সেবনের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো নির্দেশনাও নেই।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বিক্রি আমাদের দেশে বরাবরই বেশি। গত বছরও ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়েছে। চিকিৎসকরা তিনটি কারণে রোগীদের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে পরামর্শ দেন। এগুলো হলো যদি কোনো রোগীকে ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, যদি রোগীর পেপটিক আলসার হয়ে থাকে এবং যদি গলা-বুক জ্বালাপোড়া করে। কিন্তু আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ রোগী বিনা কারণেই বা অপ্রয়োজনেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করেন। অধ্যাপক ফারুক বলেন, নিয়ম না মেনে বা অপ্রয়োজনে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেড অ্যালার্ট (বিশেষ সতর্কতা) জারি করা আছে। কারণ এতে পাকস্থলী, যকৃৎ, কিডনিসহ শরীরের মাল্টি অর্গান ফেইলিউর ঘটতে পারে। এমনকি নার্ভাস সিসটেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই কোনো গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের ওষুধ সেবন না করতে পরামর্শ দেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি, উকিল খুঁজছেন স্বপন

মুন্সিগঞ্জে ‘গত আগস্টে লুট করা অস্ত্র’ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা

গরিবের স্বপ্নেই থাকে ইলিশ

কেউ ছাই দেওয়া হাত থেকে বের হতে পারবে না : উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

বাংলাদেশে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

১০

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

১১

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

১২

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

১৩

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

১৪

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

১৫

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১৬

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১৭

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১৮

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৯

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

২০
X