রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জোর খাটিয়ে সরকারি বাসা দখলে নিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ. এফ. এম তারিক হোসেন খান। বরাদ্দ ছাড়াই বাসা দখলের বিষয় জানিয়ে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ কয়েকটি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র কালবেলাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
আবাসন পরিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স) তারিক হোসেন খান ঢাকা মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের ১৩/৬ বাড়ির ৮/বি নং ফ্ল্যাটটি (এফ-শ্রেণি) গত ১ জানুয়ারি দখল করে নেন। ওইদিন তিনি ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবল নিয়ে এবং নিজের প্রভাব খাটিয়ে ভবনের প্রাইভেট গার্ডের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত ছাড়াই নিজ দায়িত্বে বাসাটি দখল নিয়ে অবৈধভাবে বসবাস শুরু করেন। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ বরাদ্দ বিধিমালা ১৯৮২-এর ১৮(২)(বি) উপবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, এ. এফ. এম তারিক হোসেন খান বিসিএস (পুলিশ) ২৪তম ব্যাচে যোগদান করেন। তিনি ফরিদপুরের বাসিন্দা। অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশেও কাজ করেছেন। বর্তমানে ডিএমপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ অপারেশনসে দায়িত্ব পালন করছেন তারিক।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বরাদ্দ বিধিমালা ১৯৮২-এর ১৮ অনুযায়ী দখলকৃত বাসাটির পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে তার এমন অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বিধি অনুযায়ী তারিক হোসেনকেও বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে আবাসন পরিদপ্তর। তবে এখনো বাসা দখলে রেখেছেন তিনি। এ নিয়ে আবাসন পরিদপ্তরে নানা ‘কথাবার্তা’ হচ্ছে। আবাসন পরিদপ্তরটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের অধীন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি বাসা বরাদ্দ দেওয়ার কাজটি করে এ পরিদপ্তর।
তারিক হোসেন খানের বিষয়টি জানিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছেও গেছে চিঠি।
নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি বাসা বরাদ্দ দিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন দাখিলের আহ্বান জানায় আবাসন পরিদপ্তর। বর্তমানে অনলাইনেই বাসা বরাদ্দের আবেদন নেওয়া হয়। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে বরাদ্দের জন্য সচিবের সভাপতিত্বে সভা হয়। সেখানেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বাসা বরাদ্দ চূড়ান্ত হয়। কিন্তু উপপুলিশ কমিশনার তারিক হোসেন সেসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই নিজের জোর খাটিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাসাটি দখলে নিয়েছেন। এ নিয়ে আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা তারিকের এমন কর্মকাণ্ডকে পেশিশক্তির অপব্যবহার হিসেবেই দেখছেন। তার এমন আচরণের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও উঠেছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ অবৈধভাবে এমন কাজ করার সাহস পাবে না বলে মনে করেন তারা। তারিক হোসেন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অসদাচরণ করেছেন বলেও জানান কর্মকর্তারা।
আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ভূঞা কালবেলাকে বলেন, আমরা তাকে বাসাটি ছেড়ে দিতে গত রোববার নোটিশ দিয়েছি; কিন্তু কোনো জবাব পাইনি। ‘ফলাফলের’ জন্য অপেক্ষা করছি। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-পুলিশ কমিশনার তারিক হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, জোর করে উঠেছি বিষয়টি ঠিক নয়। তবে ওই বাসায় বসবাস করার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
তারিক প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি পুলিশ নিয়ে জোর করে বাসায় উঠব কেন? তাহলে কি বাসাটি বরাদ্দ নিয়েছেন এবং কবে বরাদ্দ পেয়েছেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব। এখন কথা বলতে পারব না।