বগুড়ার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদই শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। ‘বড় মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদটি মুঘল শাসক শাহ আলমের শাসনামলে ১৭৮৭ সালে নির্মিত। কথিত আছে, কুন্দগ্রামের জমিদার সৈয়দ আকবর হোসেন চৌধুরী স্বপ্নে মসজিদ তৈরির নির্দেশনা পেলে একদিন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে তিনি বগুড়ায় আসেন।
করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত সুফি সাধক শাহ ফতেহ আলীর মাজারের ৫০ থেকে ৬০ গজ সামনে তিনি স্বপ্নে দেখা জায়গাটি খুঁজে পেয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তবে নির্মাণ শেষ করার আগেই আকবর হোসেন ইন্তেকাল করেন। পরে তার মেয়ে লতিফাতুন নেছা নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।
সৈয়দ আকবর হোসেন চৌধুরীর বংশধর পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াব মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। মরহুম মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর নাতি সৈয়দ রায়হান হাসান আলী মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লি। মসজিদটি পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের (পদাধিকার বলে) নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। মুঘল শাসনামলে নির্মিত অন্যান্য মসজিদের মতো বগুড়ার বড় মসজিদটিও তিন গম্বুজবিশিষ্ট। চুন ও সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৫ ফুট। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে পাঁচটি দরজা। এর মধ্যে তিনটি পূর্ব দিকে, বাকি দুটির একটি উত্তর এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। মূল মসজিদে তিন কাতারে মোট ৭৫ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পশ্চিমে একটি পুকুরও ছিল। ওই পুকুরের পানি দিয়ে মুসল্লিরা অজু করতেন। কালক্রমে পুকুর ভরাট করে টয়লেট, অজুখানা এবং দোকানপাট নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে মসজিদের পূর্ব প্রান্তে একটি সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্নে মূল মসজিদের পূর্ব প্রান্তরটি উন্মুক্ত ছিল। মূল মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেলে মুসল্লিরা উন্মুক্ত প্রান্তরে নামাজ আদায় করতেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে যোগদান করা প্রধান মুয়াজ্জিন আরিফ বিল্লাহ বলেন, পুরোনো ও সম্প্রসারিত অংশ মিলে বর্তমানে মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে নবাব পরিবারের সদস্যসহ বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি নামাজ আদায় করেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলি চৌধুরী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন।
এ ছাড়া ভারতের ফুরফুরা শরিফের প্রতিষ্ঠাতা আবু বক্কর সিদ্দিক এবং কারামত আলি জৈনপুরী পীরও এখানে নামাজ আদায় করেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ও একসময় বড় মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
বড় মসজিদে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে নামাজ আদায় করে আসা মুসল্লি আ ন ম আজিজুর রহমান বলেন, বড় মসজিদ শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। এখানে নামাজ আদায় করে মানসিকভাবে এক ধরনের তৃপ্তি মেলে।
মসজিদের খতিব আজগর আলী বলেন, মুসল্লিদের অনেকে আমাকে বলেছেন, আধ্যাত্মিকতার স্বাদ পেতে তারা এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন।
মন্তব্য করুন