৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর প্রথম ঈদ। আর দীর্ঘ ছুটি। তাই সময় নিয়ে এবার মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পর্যটন স্পট দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই এই অঞ্চলে ভিড় বাড়ছে।
মিরসরাইয়ের সবুজ পরিবেশ, নির্মল হ্রদ, ঝরনা কাছে টানে প্রকৃতিপ্রেমীদের। সময়াভাবে যাদের এসব জায়গায় ইচ্ছা থাকলেও আসা হয়ে ওঠেনি, এই দীর্ঘ ছুটি কাজে লাগাচ্ছেন তারা। প্রকৃতির টানে গিয়েছেন মিরসরাই। মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে মুহুরী প্রজেক্ট, ডোমখালী সমুদ্রসৈকত, শিল্পনগর সমুদ্রসৈকত, আরশীনগর ফিউচার পার্ক, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হ্রদ, খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া প্রকল্প, বোয়ালিয়া ঝরনা, মেলখুম ট্রেইল উল্লেখযোগ্য।
মিরসরাইয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে শিল্পনগর সমুদ্রসৈকত। ফেনী থেকে বন্ধুদের নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন তৌফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এই সমুদ্রসৈকত এখনো তেমন পরিচিত নয়। যারা অল্প টাকায় ঘুরতে চান, তারা এখানে আসতে পারেন। আমার ধারণা, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি পাবে।
জাহেদ নামে আরেকজন বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। এই প্রথম এখানে এলাম, খুব ভালো লেগেছে। কোনো ঝামেলা নেই। খুবই নিরিবিলি পরিবেশ। তুহিন নামে এক পর্যটক বলেন, ৮ জন বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে ফেনী থেকে এখানে বেড়াতে এসেছি। এখানে এত সুন্দর জায়গা আছে, জানা ছিল না। খুব ভালো লাগছে। এটি পতেঙ্গা সিবিচের মতো মনে হচ্ছে। তবে কয়েকটি খাবারের দোকান থাকলে খুবই ভালো হতো। মিরসরাই উপজেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র আরশিনগর ফিউচার পার্ক। এখানে রয়েছে কটেজ, খেলার রাইডস, চকলেট শপ, রেস্টুরেন্ট, ফুডজোন, কৃত্রিম লেক। বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের জন্য অন্যতম স্পট এটি। তাদের জন্য রয়েছে মেরি-গো-রাউন্ড, বেবি ট্রেনসহ প্রায় অর্ধশত ভাস্কর্য ও রাইডস। আছে কটেজ ও নাইট ক্যাম্পিং সুবিধা। ঈদের ছুটিতে আরশিনগর ফিউচার পার্কে ভিড় করছেন পর্যটকরা। নানা বয়সের মানুষ এখানে বেড়াতে এসেছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বা একসঙ্গে বসে গল্প করছেন। সবচেয়ে বেশি খুশি শিশুরা। বিভিন্ন রাইডসে চড়ছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০০ টাকায় টিকিট কিনে অনেক কিছু দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে ঈদের ছুটিতে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়ার চারদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়। মহামায়ার ‘মায়া’ কেবল এ বর্ণনায়ই সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। এ যেন শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা কোনো ছবি। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হ্রদ। ঈদের প্রথম তিন দিন এখানে ভিড় ছিল অনেক। এখন কমছে। টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন ভালো পর্যটক ছিল। আজ (শুক্রবার) কম।
বন বিভাগ থেকে নিষিদ্ধ হওয়া মিরসরাইয়ের আলোচিত মেলখুম ঝিরিপথে ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ করা গেছে। জানা গেছে ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন অনেক পর্যটক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে এসেছিলেন।
এ ছাড়া ঝরনার দিকে ছুটে গেছেন অনেকে। যদিও বর্ষা মৌসুমের মতো পানি এখন নেই। তার পরও ঝরনার আকর্ষণ কমেনি। এভাবে মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলোয় যাচ্ছেন পর্যটকরা। কয়েকটি স্পটে শুধু ইজারার কারণে টিকিট সংগ্রহ করে যেতে হয়। বেশিরভাগ স্পটই উন্মুক্ত।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় সারা বছর পর্যটক থাকেন। ঝরনায় বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে আসা-যাওয়া করতে বলা হয়েছে। গাইড ছাড়া কেউ যেন ঝরনায় যেতে না পারেন, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।
মন্তব্য করুন