বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সিলেটেরই সন্তান। রাজনৈতিক পরিবার ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণ নেই। দু-তিন দিন আগে জুবাইদা রহমানকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রার্থিতা দেখতে চেয়ে বেনামি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে নগরজুড়ে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সেইসব পোস্টারে প্রচারকারী ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম না থাকায় অনেকেই বলছেন ‘এর উদ্দেশ্য ভিন্ন’। তা ছাড়া সাঁটানো পোস্টার অনেক জায়গায় ছিঁড়ে ফেলতেও দেখা গেছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরায় জুবাইদা রহমানকে স্বাগত জানিয়ে সিলেটে আনন্দ মিছিলের পর নগরজুড়ে এসব পোস্টারিং করা হয়। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে সিলেট বিএনপির দুটি বলয়। এর নেতৃত্বে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মুক্তাদির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন।
গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় জুবাইদা রহমানের ছবিসহ রঙিন পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। সেই পোস্টারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিও যুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া লেখা আছে, ‘বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জুবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে আমরা অবহেলিত-বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই।’ তবে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পয়েন্ট, আম্বরখানা বড়বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো থাকলেও অনেক জায়গায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তবে কে বা কারা পোস্টারগুলো লাগিয়েছেন, আর কারাই বা সেসব পোস্টার ছিঁড়ছে, সেটা জানেন না কেউ-ই।
নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়েই মুক্তাদির ও আরিফুলের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল ছিলেন তৎকালীন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর যখন মুক্তাদির রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন, সেটা আরিফুল সহজভাবে নেননি। কারণ, ভবিষ্যতে সিলেট-১ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা ছিল। মুক্তাদির রাজনীতিতে আসায় এবং স্থানীয় বিএনপিতে ‘আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করায়’ আরিফুলের স্বপ্নে চিড় ধরে। মূলত এ কারণেই দুই নেতার বিরোধ ক্রমে বাড়ছে।
এদিকে, নগরজুড়ে সাঁটানো বেনামি পোস্টারে বিএনপির ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে আলোচনা। এমনকি জুবাইদা রহমানের প্রার্থিতা হওয়া না হওয়া নিয়েও সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকপাড়া। নেতাকর্মীরা বলছেন, পরিচয় গোপন রেখে জুবাইদাকে নিয়ে পোস্টার সাঁটানোর কারণে সবার মধ্যে প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে এই পোস্টার সাঁটিয়েছেন, তা নিয়েও চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। একাধিক নেতা বলেছেন, সিলেটের মেয়ে জুবাইদা রহমান সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হলে সেটা দলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ হবে। কিন্তু জুবাইদা রহমানের সম্মতি ছাড়া তার প্রার্থিতার বিষয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালানো হলে বুঝতে হবে, এখানে অন্য কোনো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ আছে।
কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোস্টার সাঁটানোর পেছনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক ও তার ঘনিষ্ঠজনরা সম্পৃক্ত। কারণ, কিছুদিন আগেও আরিফুল হক যুক্তরাজ্যে একাধিক সভায় সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘দলের কেউ যদি পছন্দ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ও সিলেটের কৃতী সন্তান জুবাইদা রহমানের পোস্টার লাগান, সেটা তো দোষের কিছু নয়। এই গণতান্ত্রিক অধিকারে অন্যদের তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি পোস্টার লাগালে তো নিজের নাম উল্লেখ করে ‘সৌজন্যে আরিফুল হক চৌধুরী’ লিখেই লাগাব।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী কালবেলাকে বলেন, ‘পোস্টার সাঁটিয়েছে কারা, আর পোস্টার ছিঁড়েছে কারা, আমি এসবের কিছুই জানি না।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘জিয়া পরিবার আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়গা। অথচ নাম-পরিচয় কিংবা সংগঠন ব্যবহার না করে পোস্টার নগরজুড়ে সাঁটিয়ে জিয়া পরিবারকে অসম্মানিত করা হয়েছে, মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।’ এমন কাজকে নিন্দনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিয়া পরিবার কিংবা সেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রচার করতে চাইলে সেটা প্রকাশ্যভাবে পরিচয় উল্লেখ করে দায়িত্ব নিয়েই করতে হবে।’ তবে, পোস্টার সাঁটানো কিংবা ছেঁড়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের পোস্টার কারা লাগিয়েছে, কারা ছিঁড়ে ফেলছে, তা আমার জানা নাই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।
ধানমন্ডিতে ফের জুমার নামাজ আদায় করলেন ডা. জুবাইদা
কালবেলা প্রতিবেদক জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান রাজধানীর ধানমন্ডিতে বায়তুল আমান জামে মসজিদে ফের জুমার নামাজ আদায় করেছেন। গতকাল দুপুরে মসজিদে নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে নামাজ আদায় করেন তিনি।
নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হলে উৎসুক লোকজন তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। ডা. জুবাইদা রহমান হাস্যোজ্জ্বল মুখে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং হাত উঁচিয়ে সালাম দেন। এ সময় সেখানে বিএনপির মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু, নিলুফার চৌধুরী মনি, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বাবা সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মরহুম মাহবুব আলী খানের ধানমন্ডির বাসায় যান জুবাইদা রহমান। সেখানে মা ইকবাল মান্দ বানুসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান। এরপর রাতে গুলশানে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় ফিরে যান তিনি। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফিরোজা থেকে পুলিশ স্কট সহকারে বের হন ডা. জুবাইদা।
গত জুমায়ও ধানমন্ডির একই মসজিদে নামাজ আদায় করেন জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ৬ মে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরেন তিনি। প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানও তাদের সঙ্গে আসেন।
মন্তব্য করুন