কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিএনপির কর্মিসভাস্থলে হামলা ও গুলি চালানোর ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রধারী তিন ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ঘটনার সময় মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও দেখে এ তথ্য পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেদকের হাতে আসে সেই ভিডিওটি।
৬ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীদের ভয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী মফিজুল ইসলামের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। সেই ছাদ থেকে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সভাস্থলে তিনজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, বাকিদের হাতে লাঠি ও লোহার রড। এসব দিয়ে তারা সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করছে। ভিডিওতে বেশ কয়েক দফা গুলির শব্দও শোনা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটিতে দৃশ্যমান অস্ত্রধারীদের একজন আবাদ হোসেন। সে সময় পাঞ্জাবি পরা ছিলেন। আবাদ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহীনের অনুসারী। সাদা শার্ট পরা অস্ত্রধারী হলেন বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের যুবলীগকর্মী নাইম হোসেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মজুমদারের অনুসারী। কালো টি-শার্ট পরা অস্ত্রধারী বরুড়া উপজেলার বাসিন্দা ছাত্রলীগকর্মী মাহমুদ হোসেন। তিনি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল হাসান রাফীর অনুসারী। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভিডিওতে দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে আবাদ হোসেন বলেন, আমি সেখানে ছিলাম না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
হামলার ঘটনায় তিন দিন পার হলেও এখনো মামলা হয়নি। আটক করা হয়নি কাউকেই। লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউছুপ আলী মীর পিন্টু বলেন, ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করা হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াতউল্লাহ বলেন, সেদিন আমাদের মিছিলে বিএনপির হামলায় ছাত্রলীগের সাত থেকে আট নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় আমরাও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ হানিফ সরকার বলেন, ওই দিন দুদলের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লালমাইয়ের গৈয়ারভাঙ্গা বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। এ সময় দলটির নেতারা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিএনপির সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহীন বলেন, বিএনপির লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
এদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গত শনিবার বিকেল ৩টায় উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের বাড়িতে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গৈয়ারভাঙা বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বিএনপির কর্মিসভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন । বিএনপির নেতা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা কয়েক দফা গুলি ছোড়ে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মনির হোসেনের মাথায় গুলি লাগে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ খানের পায়ে ও পেটে গুলি লাগে। পরে তাকে কোপায় হামলাকারীরা। এ ছাড়া কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।
মন্তব্য করুন