কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে এ বছর ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু শেষ সময়ে এসে লবণ বিতরণের পরিমাণ কমানোও হয়েছে। বরাদ্দে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে অধিকাংশ মিল মালিকই এখন লবণ সরবরাহ করছেন না। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে পশুর চামড়া সংরক্ষণে সরকারের বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রম। মূলত মিল মালিক সমিতি ও বিসিকের কিছু কর্মকর্তার স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মিলাররা। দুই দিনের ব্যবধানে লবণের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় দেড় টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, সরকার ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহের ঘোষণা দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন মিল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লবণের বিক্রি অস্বাভাবিক কমে গেছে। সর্বশেষ ২৮ মে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বরাদ্দপত্রে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাউকে কম, কাউকে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে দেশের ৬৪টি জেলায় মোট ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে কাঙ্ক্ষিত চাহিদা না থাকায় লবণ বিতরণের পরিমাণ কমিয়ে ৯ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়। মিল মালিক সমিতির শীর্ষ নেতাদের স্বজনপ্রীতির ফলে সাধারণ মিলাররা সরবরাহ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিসিকসহ স্থানীয় প্রশাসন।
মিল মালিকদের অভিযোগ, সমিতির কিছু নেতা সুবিধাজনক জেলাগুলোয় লবণ সরবরাহের সুযোগ নিয়েছেন। আবার সাধারণ মিল মালিকদের স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে নিজেরা একাধিক নামে কয়েকগুণ বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন। যার কারণে লোকসানের আশঙ্কায় অনেক মিল মালিক লবণ সরবরাহ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এরই মধ্যে সমিতির প্রভাবশালী নেতাদের অনিয়মের অভিযোগে একজন সহসভাপতি ও একজন সদস্য সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে মিলারদের লবণ সরবরাহ না দিতে নির্দেশ দেওয়ায় মিল মালিকরা একযোগে সরকারের লবণ সরবরাহ কার্যক্রম বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে এরই মধ্যে দেশের বাজারে লবণের দাম বেড়ে গেছে। দুই দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি দুই মণ (৭৪ কেজি) লবণের দাম প্রায় ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রোববার প্রতি দুই মণ ক্রুড লবণ বিক্রি হয়েছে ৮১০ থেকে ৮২০ টাকা। আবার ক্রাশিং করা লবণ বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯৫০ টাকায়। অথচ সরকারিভাবে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য লবণের দাম ধরা হয়েছে ৮৮৭ থেকে ৯০০ টাকা। অর্থাৎ মিলগেটে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বরাদ্দের লবণ দিতেও অনীহা দেখাচ্ছেন মিল মালিকরা।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ রেজুয়ানুল ইসলাম বলেন, সরকার পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ কাজকে বিঘ্নিত করতে চায়। সরকারি ঘোষণার ফলে সারা দেশের ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানগুলো লবণ ক্রয় করেনি। এখন বরাদ্দে অনিয়মের ফলে অনেক মিল মালিক লবণ সরবরাহ করে লোকসানের মধ্যে পড়বেন। সমিতির শীর্ষ নেতাদের এ ধরনের অনিয়মের কারণে আমি সমিতির সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।
যদিও অভিযোগের বিষয়ে একমত নন সমিতির সভাপতি নুরুল কবির। তিনি বলেন, সরকার ৩০ হাজার টনের ঘোষণা দিলেও মাঠপর্যায়ের প্রশাসন থেকে চাহিদা এসেছে কম। এ কারণে মিলগুলোকে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেউ এ বিষয়ে আপত্তি জানালে বরাদ্দের পরিমাণ পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল) সরোয়ার হোসেন বলেন, মিল মালিক সমিতি ও বিসিকের সঙ্গে আলোচনা করেই লবণ বরাদ্দের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে এ তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে কেউ যদি মনে করেন লবণ সরবরাহ দিয়ে লোকসান হবে, তবে বিসিকের কিছুই করার নেই। বাড়তি ঘোষণা দেওয়া হলেও মাঠ প্রশাসনের চাহিদা পাওয়ার পর বিনামূল্যে লবণ সরবরাহের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ঘোষণার ফলে মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা লবণ ক্রয় কমিয়ে দেওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে জটিলতা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন