চলছে বর্ষা ঋতু। ঝরছে বৃষ্টি। কিন্তু পানিতে টইটম্বুর হয়নি নদীনালা, পানিশূন্য বিল। অথচ আগে বর্ষা মৌসুমে নদীনালা, চলনবিলসহ আশপাশের নিচু অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যেত। এখন বিলের প্রবহমান নদীনালাগুলোয় নেই পর্যাপ্ত পানি। পানির হাহাকারে ভুগছে গোটা চলনবিল। আর এর প্রভাব পড়ছে বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকায়।
এক সময় বর্ষা এলেই ভরত নদীনালা, বিলে পানি উপচে আশপাশের নিচু অঞ্চল তলিয়ে যেত। চলত মাছ ধরার মহোৎসব। নতুন পানিতে সেঁওতিজাল, খোরাজাল, বয়াজালসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছ ধরত বিল অঞ্চলের মানুষ। কৈ, বাচা, বোয়াল, শিং, টেংরা, বাতাসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এ সময়ে বিল অঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িতে রান্না হতো দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলার এক হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছিল চলনবিল। বর্তমানে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ—এই তিন জেলার ১০টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নের এক হাজার ৬০০টি গ্রাম নিয়ে এই বিল। বিলের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ২১টি নদনদী। এ ছাড়া বিলের ভেতরে রয়েছে ৭১টি নালা-খাল এবং ৯৩টি ছোট বিল।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বালষা ও রুহাই বিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গোটা বিলে হাঁটুপানি। বিলের বুক চিরে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। সেই রাস্তায় রয়েছে ছোট-বড় ব্রিজ ও কালভার্ট। এখনো পানিতে ডুবে নেই বিল। বিলে নেই কোনো আমন ধান। অথচ এ সময়ে বিলজুড়ে থাকার কথা ছিল পানি আর পানি, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা আমন ধান।
উপজেলার বিল এলাকার বাসিন্দারা বলেন, আগে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিলে পানি থাকত। গত দুই বছর এর উল্টো চিত্র। গত বছরের এ সময়ে বিলে সামান্য পানি ঢুকলেও এ বছর বর্ষা শেষ হওয়ার পথেও পানি নেই বিলে। এর মূল কারণ বিলের অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এতে যেমন মৎস্যসম্পদ নষ্ট হচ্ছে, হারাচ্ছে কৃষিজমির উর্বরতা।
বিল এলাকার কৃষক মিজু, আফজাল, ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েকজন বলেন, বিলে পানি না থাকায় আবাদ হয়নি আমন ধান। এ বছর বর্ষা শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, অথচ পানিশূন্য বিল। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এখানকার কৃষকদের। গত দুই বছরও বিলে পর্যাপ্ত পানি হয়নি। এ বছরও বিলে পানি না হলে জমি হারাবে উর্বরতা শক্তি। বাড়বে উৎপাদন খরচ, কমে আসবে কৃষি আবাদ।
গুরুদাসপুর উপজেলার মৎস্যজীবী আলামিন, কামরুল ও রনি বলেন, ‘বর্ষা আসবে বিলে হবে পানি। এ আশায় বর্ষা শুরুর আগেই মাছ ধরার জন্য খেয়াজাল, জাকই জাল, ধুন্দি, চাঁই, পলোসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে রেখেছি। বর্ষা এসেছে, কিন্তু বিলে নেই পানি। মাছ ধরেই চলে আমাদের জীবন-জীবিকা। অথচ ভরা বর্ষায় বিলে পানি না থাকায় আমাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।’
গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আক্কাছ বলেন, উপজেলার প্রবাহমান নদী ও চলনবিল রক্ষায় অনেক মানববন্ধন, সেমিনার ও সভা-সমাবেশ করেছি। আজ পর্যন্ত এ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবগত করেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমাদের চোখে পড়েনি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত করিম মোবাইল ফোনে বলেন, আত্রাই, গুমানী নন্দকুজাঁসহ প্রবাহ নদীগুলোতেই কম পানি। প্রবাহ নদীগুলো উপচে চলনবিলে প্রবেশ করে পানি। তবে পানি বাড়ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই পানিতে ভরপুর হবে চলনবিল।
মন্তব্য করুন